নারায়নপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ফ্যানের দাবিতে অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষক
- আপডেট সময় : ০১:৪০:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ জুলাই ২০২৩ ১১০ বার পড়া হয়েছে
তানোর প্রতিনিধি:
বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেড়ার উপরে মাটির তৈরি দেয়াল মাথার উপরে টিন তাপদহের মধ্যেই চলছে পাঠদান, বিদ্যুৎ ফ্যান, বাথরুমের দাবিতে অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষক পালিয়ে রক্ষা পান, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়ানো কম্পিউটার, সরকারের দেয়া বই বিতরণ না করে বিক্রির জন্য বস্তা বন্দী করে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী। মিডিয়া কর্মীর উপস্থিতির খবর টের পেয়ে উধাও তিনি ।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়ন (ইউপির) নারায়নপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বিগত প্রায় ৩০ বছর ধরে চলছে এভাবেই পাঠদান। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীতে বিগত প্রায় ৩০ বছর ধরে চলছে জরাজীর্ণ মাটি ও টিনের ঘরে পাঠদানের ঘটনা । প্রচন্ড তাপদহে শিক্ষার্থীরা বসে থাকতে পারে না। কোন রকমে কয়েক ঘন্টা থাকলেও দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের ক্লাস করা যেন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা ফ্যান ও বাথরুমের জন্য গত রবিবার প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলীকে অবরুদ্ধ করেন তিন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। এমন অভিযোগে মিডিয়া কর্মীদের আসার খবরে পালিয়ে যান প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী। শুধু তাই না জাতীয় পতাকা দিয়ে কয়েক বছর ধরে মুড়ানো রয়েছে কম্পিউটার। কোন দিন হয়নি ক্লাস। অথচ নিয়োমিত বেতন ভাতা তুলছেন শিক্ষক। ফলে ডিজিটাল যুগে এমন স্কুল কল্পনাতীত। এতে করে শিক্ষা কার্যক্রম চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন অভিভাবক মহল।
রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়ন (ইউপি) থেকে বিল্লিহাট যাওয়ার পথে মূল রাস্তার পাশে ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নারায়নপুর উচ্চ বিদ্যালয়। রাস্তা সংলগ্ন দক্ষিণে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণী এবং কমনরুম রয়েছে। পশ্চিম দিকে এক তলা পাকা ভবন। সেই ভবনে অফিস কক্ষ নবম ও দশম শ্রেণী। পাকা ভবনে বিদ্যুৎ ফ্যান সবকিছুই রয়েছে। শিক্ষকদের রুমের দক্ষিণ পূর্ব দিকে প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলীর বসার আলিশান চেম্বার। অফিস কক্ষের উত্তরে ক্লাস রুম।
সেখানেই টেবিলে কম্পিউটার রয়েছে। সেই কম্পিউটার জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়ানো আছে। কক্ষের পশ্চিম সাইডে টেবিলে ও তার নিচে পাঁচ বস্তা বন্দী সরকারি বই। বইগুলো বিক্রির জন্যই নাকি বস্তা বন্দী করে রাখা হয়েছে। জরাজীর্ণ মাটির ভবনে অষ্টম শ্রেণীতে তিন জন শিক্ষার্থী বসে আছে।
তারা জানান, আজ আমরা ফ্যান ও বাথরুমের দাবিতে স্যারের ঘরে অবস্থান করি বা স্যারকে তিন শ্রেণীর সকল শিক্ষার্থীরা এক প্রকার অবরুদ্ধ করে রাখি। স্যার ওয়াদা করে বলেন অল্প দিনের মধ্যে সব ব্যবস্থা করা হবে বলার পর আমরা ক্লাসে আসি। তোমরা তিনজন কেন আর শিক্ষার্থী কোথায় জানতে চাইলে তারা জানান অনেক শিক্ষার্থী ছিল টিফিনে যাওয়ার নাম করে সবাই চলে গেছে। কারন মাথার উপরে টিন, প্রচন্ড তাপ ও গরমের কারনে কেউ থাকতে পারে না। সপ্তম শ্রেনীতেও তিনজন ছাত্রী ছিলেন, তারাও একই কথা বলেন। ষষ্ঠ শ্রেনীতে ক্লাস চলছিল। স্কুলের মাঠের অবস্থা ও ক্লাস রুমের অবস্থা একই রকম।
স্কুলে ছিলেন না প্রধান শিক্ষক। দায়িত্ব পালন করছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঝড়ে তিন কক্ষ উড়ে গিয়েছিল, পুনরায় বাঁশের কঞ্চির বেড়া ও টিন দিয়ে ছেয়ে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ ফ্যান না থাকার কারনে শিক্ষার্থী না আমাদের ক্লাস নিতে চরম কষ্ট হয়। কি করব অনেক আবেদন করেও কোন ব্যবস্থা হয়নি। বিগত বিএনপি সরকারের সময় এই পাকা ভবন হয়েছিল উন্নয়ন বলতে এটাই। অফিস রুমে প্রায় সব শিক্ষকরা ছিলেন তারা জানান, সম্প্রতি তিনটি নিয়োগ হল স্কুল কে এক টাকাও দেয়া হয়নি।
এসব বিষয়ে কথা বললে আমাদেরও সমস্যা। রুম সংকটের কারনে বস্তায় বই রাখা হয়েছে, ওই রুমেই লাইব্রেরি, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও বিজ্ঞানাগার এবং ক্লাস রুম। জাতীয় পতাকা দিয়ে কম্পিউটার মুড়ানো যায় কিনা জানতে চাইলে একযোগে সকল শিক্ষক বলেন, পতাকাটা ছিড়ে গিয়েছিল এজন্য কম্পিউটার ঢাকা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গেট নির্মাণ ও সাইনবোর্ডও নাই। পাকা ভবনের দেয়ালে কালো কালি দিয়ে স্কুলের নাম ও স্থাপিত এসব লিখা আছে।
জানা গেছে, ১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় প্রতিষ্ঠিত হয় নারায়নপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এমপিও হয় এবং ২০০১ সালে নবম এবং দশম শ্রেণীর এমপিও হয়। গত এসএসসি পরিক্ষায় ৩২ জন অংশ নিয়ে ৩০ জন পাস করেন। বর্তমানে স্কুলটিতে ১৯৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে এবং ১২ জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী আছেন। কম্পিউটার শিক্ষক প্রভাবশালী হওয়ার কারনে স্কুলেই আসেন না।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাওসার আলী কে এসব বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, আমি নামের সভাপতি, স্কুলে কে এল আর কে এলনা এসব আমার দেখার দরকার নাই। ফ্যানের জন্য শিক্ষার্থীরা থাকছেন না জানতে চাইলে তিনি জানান আমি কি তাদের কে বাড়ি থেকে এনে স্কুলে নিয়ে আসব বলে এড়িয়ে যান তিনি ।
প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, ফ্যান অল্পদিনের মধ্যেই দেয়া হবে এবং কম্পিউটার শিক্ষক প্রভাবশালী হওয়ার কারনে কিছুই বলা যায় না। সম্প্রতি স্কুলে তিনটি নিয়োগ হল স্কুল উন্নয়নের নামে টাকাও নেয়া হল সেই টাকা কোথায় জানতে চাইলে তিনি জানান, নিয়োগ কিভাবে হয় আর কোথায় টাকা যায় এসব সবার জানা বলে তিনিও দায় সারেন।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, স্কুলের জরাজীর্ণ ঘর ফ্যান এসব স্কুল কর্তৃপক্ষের বিষয়। কম্পিউটার জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢাকা যায় কিনা এবং সরকারের দেয়া বই বস্তা বন্দী হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান কোন ল্যাবঘর নেই এজন্য কম্পিউটার ক্লাস হয়না, ওই কম্পিউটারে স্কুলের কাজ করা হয়, জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢাকা সঠিক কাজ না। তবে বিষয় গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।
প্রসঙ্গনিউজবিডি/জে.সি