ঢাকা ০৪:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে তিব্র তাপদাহে ভোগাচ্ছে লোডশেডিং, ভোগান্তিতে জনজীবন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:০৯:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪ ৩৬ বার পড়া হয়েছে

( প্রতীকী ছবি)

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহীর ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড রোদ আর গরমে সাধারণ মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। গরমের কারণে দুপুরের পর শহরের প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ক্লান্ত শরীরে গাছের ছায়ায় বসে থাকছেন শ্রমজীবী মানুষ। গ্রামেও দেখা মিলছে একই চিত্র।

তাপপ্রবাহ বাড়ার সাথে সাথে রাজশাহী অঞ্চলে শুরু হয়েছে বিদ্যুতের লোড শেডিং। এতে করে জনদুর্ভোগ বেড়ে গেছে আরো একধাপ। রাজশাহী মহানগরীর পাশাপাশি গ্রামেও বিদ্যুতের যাওয়া আসা খেলায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতের শেষ আর গরুমের শুরুতেই বিদ্যুতের এই যাওয়া আসার খেলায় মিশ্রপ্রতিক্রীয়া দেখা দিয়েছে জনসাধারনের মাঝে।

গ্রামঅঞ্চলে দিনের বেলা মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করলেও ইফতারির পর থেকে সেহরী খাওয়া পর্যন্ত ঘনঘন বিদ্যুৎ যাওয়া আসায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে জনগন। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছে লোডশেডিং সেভাবে নেই। বিদ্যুতের মেইনটেনস এর কাজ চলমান থাকায় মাঝে মধ্যে লাইন টেনে কাজ করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রাজশাহীর প্রায় সব উপজেলাতেই গরম শুরু হওয়ার সাথে সাথে ঘনঘন বিদ্যুৎ যাওয়া আসা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মাগরিবের নামাজের পর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বিদ্যুৎ আসলেও তারাবিহর সময় পুনরায় টেনে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও রাত ১১ টার পর থেকে ফজরের আযানের আগে একাধিকবার বিদ্যুৎ টেনে নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ টেনে প্রায় আধাঘন্টা থেকে শুরু করে ১ ঘন্টার সময়ও অধিক সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে করে গরমে মানুষ কাহিল হয়ে পড়ছে। বাসা বাড়ীতে শিশু, বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এছাড়াও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা লেখাপড়া ঠিক মত করতে পারছেনা।

তীব্র রোদ আর গরমে জমির পানি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় জমিতে পানির চাহিদা বেড়ে গেছে। কৃষকরা জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ডিপটিউব ওয়েল গুলোতে ধর্না দিচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক মত না থাকায় সময় মত পানি না পেয়ে জমিতে পানি দিতে বিলম্ব হচ্ছে। এতে করে পানির অভাবে ধানের ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।

গোদাদাড়ীর কৃষক আবুল হোসেন জানান, বিদ্যুৎ ঠিকমত না থাকায় জমিতেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না ফলে ধানের ক্ষতি হতে পারে। গরমের শুরুতেই যদি বিদ্যুতের এমন ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে পরবর্তিতে আরো জমির ফসলের ক্ষতি হবে বলে জানান।

বিদ্যুতের এমন ভেলকিবাজিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। নিজেদের ফেসবুক টাইম লাইনে লিখছেন, বিদ্যুৎ এখন যায়না মাঝে মধ্যে আসে। হাবিবুল্লাহ নামের একজন লিখেন, পল্লী বিদ্যুতের উধ্বর্তন কর্মকর্তা কর্মচারীদের গভীর ভাবে অনুরোধ জানায়, পবিত্র মাহে রমজান মাসে সেহরী খাওয়ার সময়, ইফতারের সময় এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় দয়া করে বিদ্যুৎ টানিবেন না। এমনি ভাবে বিদ্যুৎ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ ঝেড়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।

গোদাগাড়ী নেসকো অফিস সূত্র জানান, আমাদের উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১২ মেগা ওয়াট কিন্তু গতকাল সরবরাহ পেয়েছি মাত্র সাড়ে ৭ মেগা ওয়াট। দিনের বেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে তবে রাত ৯ টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

রাজশাহী নেসকো পিএলসি বিভাগীয় অফিসের প্রধান প্রকৌশলী (অপারেশন) মোঃ জাকির হোসেন বলেন, গত রাতে (শুক্রবার ) রাজশাহী বিভাগের বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ৩৮৮ মেগা ওয়াট, সরবরাহ পাওয়া গেছে ৩৭০। বৃহস্পতিবার রাতে চাহিদা ছিলো ৩৭৫ মেগা ওয়াট পাওয়া গেছে ৩৭০ এবং রাত ৯ টায় ৪৫০ মেগাওয়াট চাহিদা ছিলো সরবরাহ পাওয়াে গেছে ৩৮০ মেগা ওয়াট। বিদ্যুতের চাহিদা আবহাওয়ার উপর নির্ভর করছে। বর্তমান সময়ে গরমের তীব্রতা থাকায় চাহিদা বেশী হচ্ছে তবে বৃষ্টি হয়ে গেলে এই চাহিদা কমে যাবে। লোডশেডিং এর বিষয়ে বলেন, দিনে বেলা যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে তা লোডশের্ডি এর কারন হয়, বিদ্যুতের মেইনটেনস এর কাজ চলমান থাকায় এটি টানা হচ্ছে। তবে রাতের বেলা বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া ও জমিতে সেচপাম্পগুলো পুরোদমে চালানো হয় তাই বিদ্যুতের উপর চাপ পড়ে বলে জানান।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুরে ২টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা আজকে ছাড়িয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে এটিই রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। কয়েক দিন ধরেই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে রাজশাহীতে।চলমান আবহাওয়া আরও কয়েক দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এই সময়ের মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। তবে কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।


প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

রাজশাহীতে তিব্র তাপদাহে ভোগাচ্ছে লোডশেডিং, ভোগান্তিতে জনজীবন

আপডেট সময় : ০৯:০৯:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহীর ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড রোদ আর গরমে সাধারণ মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। গরমের কারণে দুপুরের পর শহরের প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ক্লান্ত শরীরে গাছের ছায়ায় বসে থাকছেন শ্রমজীবী মানুষ। গ্রামেও দেখা মিলছে একই চিত্র।

তাপপ্রবাহ বাড়ার সাথে সাথে রাজশাহী অঞ্চলে শুরু হয়েছে বিদ্যুতের লোড শেডিং। এতে করে জনদুর্ভোগ বেড়ে গেছে আরো একধাপ। রাজশাহী মহানগরীর পাশাপাশি গ্রামেও বিদ্যুতের যাওয়া আসা খেলায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতের শেষ আর গরুমের শুরুতেই বিদ্যুতের এই যাওয়া আসার খেলায় মিশ্রপ্রতিক্রীয়া দেখা দিয়েছে জনসাধারনের মাঝে।

গ্রামঅঞ্চলে দিনের বেলা মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করলেও ইফতারির পর থেকে সেহরী খাওয়া পর্যন্ত ঘনঘন বিদ্যুৎ যাওয়া আসায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে জনগন। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছে লোডশেডিং সেভাবে নেই। বিদ্যুতের মেইনটেনস এর কাজ চলমান থাকায় মাঝে মধ্যে লাইন টেনে কাজ করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রাজশাহীর প্রায় সব উপজেলাতেই গরম শুরু হওয়ার সাথে সাথে ঘনঘন বিদ্যুৎ যাওয়া আসা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মাগরিবের নামাজের পর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বিদ্যুৎ আসলেও তারাবিহর সময় পুনরায় টেনে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও রাত ১১ টার পর থেকে ফজরের আযানের আগে একাধিকবার বিদ্যুৎ টেনে নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ টেনে প্রায় আধাঘন্টা থেকে শুরু করে ১ ঘন্টার সময়ও অধিক সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে করে গরমে মানুষ কাহিল হয়ে পড়ছে। বাসা বাড়ীতে শিশু, বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এছাড়াও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা লেখাপড়া ঠিক মত করতে পারছেনা।

তীব্র রোদ আর গরমে জমির পানি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় জমিতে পানির চাহিদা বেড়ে গেছে। কৃষকরা জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ডিপটিউব ওয়েল গুলোতে ধর্না দিচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক মত না থাকায় সময় মত পানি না পেয়ে জমিতে পানি দিতে বিলম্ব হচ্ছে। এতে করে পানির অভাবে ধানের ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।

গোদাদাড়ীর কৃষক আবুল হোসেন জানান, বিদ্যুৎ ঠিকমত না থাকায় জমিতেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না ফলে ধানের ক্ষতি হতে পারে। গরমের শুরুতেই যদি বিদ্যুতের এমন ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে পরবর্তিতে আরো জমির ফসলের ক্ষতি হবে বলে জানান।

বিদ্যুতের এমন ভেলকিবাজিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। নিজেদের ফেসবুক টাইম লাইনে লিখছেন, বিদ্যুৎ এখন যায়না মাঝে মধ্যে আসে। হাবিবুল্লাহ নামের একজন লিখেন, পল্লী বিদ্যুতের উধ্বর্তন কর্মকর্তা কর্মচারীদের গভীর ভাবে অনুরোধ জানায়, পবিত্র মাহে রমজান মাসে সেহরী খাওয়ার সময়, ইফতারের সময় এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় দয়া করে বিদ্যুৎ টানিবেন না। এমনি ভাবে বিদ্যুৎ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ ঝেড়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।

গোদাগাড়ী নেসকো অফিস সূত্র জানান, আমাদের উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১২ মেগা ওয়াট কিন্তু গতকাল সরবরাহ পেয়েছি মাত্র সাড়ে ৭ মেগা ওয়াট। দিনের বেলা বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে তবে রাত ৯ টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

রাজশাহী নেসকো পিএলসি বিভাগীয় অফিসের প্রধান প্রকৌশলী (অপারেশন) মোঃ জাকির হোসেন বলেন, গত রাতে (শুক্রবার ) রাজশাহী বিভাগের বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ৩৮৮ মেগা ওয়াট, সরবরাহ পাওয়া গেছে ৩৭০। বৃহস্পতিবার রাতে চাহিদা ছিলো ৩৭৫ মেগা ওয়াট পাওয়া গেছে ৩৭০ এবং রাত ৯ টায় ৪৫০ মেগাওয়াট চাহিদা ছিলো সরবরাহ পাওয়াে গেছে ৩৮০ মেগা ওয়াট। বিদ্যুতের চাহিদা আবহাওয়ার উপর নির্ভর করছে। বর্তমান সময়ে গরমের তীব্রতা থাকায় চাহিদা বেশী হচ্ছে তবে বৃষ্টি হয়ে গেলে এই চাহিদা কমে যাবে। লোডশেডিং এর বিষয়ে বলেন, দিনে বেলা যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে তা লোডশের্ডি এর কারন হয়, বিদ্যুতের মেইনটেনস এর কাজ চলমান থাকায় এটি টানা হচ্ছে। তবে রাতের বেলা বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া ও জমিতে সেচপাম্পগুলো পুরোদমে চালানো হয় তাই বিদ্যুতের উপর চাপ পড়ে বলে জানান।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুরে ২টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা আজকে ছাড়িয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে এটিই রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। কয়েক দিন ধরেই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে রাজশাহীতে।চলমান আবহাওয়া আরও কয়েক দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এই সময়ের মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। তবে কালবৈশাখী বয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।


প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি