রাজশাহীতে ঋত্বিক সম্মাননা ও চলচ্চিত্র উৎসবের শুভসূচনা
- আপডেট সময় : ০৫:১৪:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০২৩ ৮৫ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটকের ৯৮ তম জন্মদিন উপলক্ষে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি এর আয়োজনে ১১ তম ঋত্বিক সম্মাননা ও চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৩ এর শুভসূচনা হয়েছে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সংলগ্ন তাঁর পিতৃভিটায়।
আজ ৪ নভেম্বর ( শনিবার) বিকেল ৫ টায় ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মাসুদের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কবি ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার শ্রী মনোজ কুমার, নাট্যজন মলয় ভৌমিক, সমাজসেবী ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি শাহীন আকতার রেণী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি উৎসব পরিচালক ও রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহসান কবীর লিটন । সভাপতিত্ব করেন ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডা. এফ এম এ জাহিদ।
সৃষ্টিশীল চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ থেকে দুজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ভারত থেকে দুজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে শামীম আকতার ও রাকিবুল হাসান এবং ভারতের কলকাতা থেকে অমিতাভ ঘোষ ও কেরালা থেকে মধু জনার্দন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিগণ মঙ্গল প্রদীপ প্রোজ্জ্বলন করেন।এরপর সকল প্রয়াত গুণিব্যক্তিদের আত্মার কল্যাণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর স্মরণীকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সম্মাননা প্রদানের পর ধ্রুপদালোক, রাজশাহীর পরিবেশনায় বিশেষ নৃত্যলেখ্য অযান্ত্রিক পরিবেশিত হয়। চলচ্চিত্র উৎসব আরো দুদিন ৫-৬ই নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হবে লালন মুক্ত মঞ্চ, পাঠানপাড়া রাজশাহী প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত টা পর্যন্ত।
ঋত্বিক সম্মাননা প্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আকতার তাঁর অনুভুতি বলেন,”আজকে আমাদের জন্য একটি বিশেষ দিন। মনে হচ্ছে আজকে আমরা ঋত্বিক ঘটককে বরণ করার জন্য একত্রিত হয়েছি।ঋত্বিক ঘটক আমাদের কাছে একটি বিশেষ নাম, বিশেষ করে যারা চলচ্চিত্র ও মানুষ বুঝে। তিনি বাংলাদেশে পদ্মা নদীর মাঝি করার জন্য ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন।কিন্তু তিনি প্রেমে পড়েন তিতাসের। আর নির্মাণ করলন তিতাস একটি নদীর নাম।”
তিনি আরো বলেন,”আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই দেখেছি তাঁর আলোড়ন সৃষ্টিকারী ছবিগুলো মানুষ কিভাবে দেখেছে।আর সেখান থেকেই আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি।১৮৭১ আমাদের জীবনে একটা বড় সময়। এটা শুধু অভ্যূদ্বয়ের জন্য নয়,এটি নতুন চেতনা, নতুন করে বাঙালি হিসেবে জেগে ওঠার চেতনা। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ তাকে ব্যাথিত করেছে। ঋত্বিক ঘটকের পিতৃভিটা দখল থেকে উদ্ধারের যে প্রক্রিয়া চলছে তার সাথে আমি সব সময় আছি।কারণ এটি আমার কাছে তীর্থস্থান,এখানে জমে উঠুক ঋত্বিক মেলা,জমে উঠুক চলচ্চিত্র চর্চা,জমে উঠুক বাণিজ্যিক ও সত্যিকারের সৃষ্টিশীল চলচ্চিত্র। ”
ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার তাঁর বক্তব্যে বলেন,” ভারতের কেরালা থেকে এসে একজন বাংলায় কিছু শব্দ বলেছেন। এটি এজন্যই সম্ভব হয়েছে যে তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড জড়িত আছেন। আজকে আমি অনেক খুশি। কেননা ঋত্বিক ঘটকের জন্মভূমিতে আছি।তিনি শুধু চলচ্চিত্র নির্মাতা নন তিনি একজন শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী।চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি কাল সমাজের জন্য। যেখানে সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকে। তাঁর অবদানের জন্য ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কারে ভুষিত করেছেন।আমি ব্যক্তিগতভাবে হতাশ কারণ থাকে স্মরণ করছি,যার জন্য সমবেত হয়েছি এখানে আরো অনেক জনসমাগমের প্রয়োজন ছিল।তাহলে অনুষ্ঠান আরো অর্থবহ হত।”
প্রধান অথিতির বক্তব্যে অধ্যাপক প্রামাণিক বলেন, “সব সময়ই মহামানবেরা বাস্তুহারা হয়ে থাকেন।মুহম্মদ (সঃ) থেকে শুরু করে নজরুল ইসলাম,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন শাহ সহ আরো অনেক। ঋত্বিক ঘটক বলে গেছেন ‘বাস্তুহারা ছিলাম, বাস্তুহারাই রয়ে গেলাম।’বাংলাদেশ থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল এই হার তিনি মেনে নিতে পারেন নি।
তিনি সব সময় বাংলাদেশকে নিয়ে কেঁদেছেন।এটি সত্যি যে কিছু মানুষ এমন পাগল যারা নিজের জীবনকে গচ্ছিত রেখে দেন মানবজীবনের সমন্বতির জন্য, দেশ ও জাতির জন্য। আর তাদের পাগলামিটা পৃথিবীর মানুষ ভালবাসে এটা তাদের বিজয় তীলক।বাস্তুহারা হয়েও তিনি সত্যিকার অর্থে বাস্তহারা নন। কেননা তিনি শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা ভারতবর্ষ তথা পৃথিবীর মানবিকতার সম্পদ।”
“ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে ঋত্বিক ঘটককে জাগ্রত রাখার জন্য সোসাইটি যে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে এজন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এটি তারা জাতীয় দায়িত্ব পালন করছে। যেটা রাষ্ট্রের করা উচিৎ ছিল। ঢাকায় তাঁর জন্ম হয়েছিল কিন্তু তাঁর পদচারণাসহ অনেক গুনিজনের পদচারণায় রাজশাহী একটি পূন্যভুমি। এখানে একটি ইনস্টিটিউট হতে পারে, সারা উপমহাদেশের একটি মিলন কেন্দ্র হতে পারে। কিন্তু আমরা বৃহৎ চিন্তা করি না।
শেষে সভাপতি সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গনিউজবিডি/জে.সি