ভারতের ট্রেন দূর্ঘটনায় এখনো খোঁজ মেলেনি চার বাংলাদেশীর
- আপডেট সময় : ০৫:২৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ জুন ২০২৩ ১১৯ বার পড়া হয়েছে
নিউজ ডেস্ক:
‘ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং’ পরিবর্তনের কারণেই ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানাগা বাজার রেল স্টেশনের কাছে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের দুর্ঘটনা ঘটে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ জানাতে গিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘রেলওয়ে সেফটি কমিশনার বিষয়টি তদন্ত করেছে, রিপোর্ট সামনে আসতে দিন। কিন্তু আমরা দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে পেরেছি। ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং পরিবর্তনের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য পুনরুদ্ধার শুরু করা।’
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ‘মেরামতের কাজ পর্যালোচনা করে বুধবারের মধ্যে ট্র্যাক পুনরুদ্ধার করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’ এমন কি এই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে সিবিআইকে দিয়ে তদন্তের সুপারিশ করেছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী।
রবিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে কাজ তদারকি করেন রেলমন্ত্রী। পরে আহতদের দেখতে, তাদের সাথে কথা বলতে, চিকিৎসা ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে বালাসোর ফকির মোহন মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী।
এদিকে ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৫, এরমধ্যে ৮৮ টি লাশকে সনাক্ত করা গেছে। আহত প্রায় এক হাজার। নিহতদের মধ্যে ৬১ জন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। আহত প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাধিক। ১৮২ টি লাশ এখনও সনাক্ত করা হয় নি।
এদিকে দুর্ঘটনায় নিহত লাশের সংখ্যা নিয়ে ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় ২৮৮ জনের নিহতের খবর, কোন কোন গণমাধ্যমে সংখ্যা ৩০০ পার করে দেওয়া হয়। এর পরই বিষয়টি নিয়ে ওড়িশার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা সংবাদ সংস্থাকে জানায় ‘নিহতের সংখ্যা ২৮৮ নয়, ২৭৫। জেলাশাসক দ্বারা ডেটা পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং দেখা গেছে যে কিছু লাশ দুই বার গণনা করা হয়েছিল। তাই লাশের সংখ্যা সংশোধনের পর ২৭৫ করা হয়েছে। ২৭৫ টি লাশের মধ্যে ৮৮টি শনাক্তকরণ করা হয়েছে।
মুখ্যসচিব এও জানান ‘দুর্ঘটনায় আহত ১ হাজার ১৭৫ জনের মধ্যে ৭৯৩ জনকে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে সময় গড়িয়ে গেলেও নিখোঁজ চার বাংলাদেশীর এখনো কোনো সন্ধান নেই। দুর্ঘটনার পর শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক) মারেফত তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল বালেশ্বরে পৌঁছায়। ইতিমধ্যেই ট্রেন দুর্ঘটনায় অল্প বিস্তর আহত এমন ৩ বাংলাদেশি নাগরিকের সন্ধান পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। তবে রবিবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতাল ও দুই অস্থায়ী মর্গ ঘুরে নিখোঁজ ৪ বাংলাদেশি নাগরিকের কোন সন্ধান তারা পাননি। তারা আদৌ বেঁচে আছেন কিনা তাও নিশ্চিত নয়। আর যদি দুর্ঘটনায় মারাই যান, সেক্ষেত্রেও তাদের লাশ পরিবারের কাছে পৌঁছাবে কিনা তাও অনিশ্চিত।
কারণ ওড়িশার মুখ্য সচিব প্রদীপ কুমার জেনা রবিবার গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে বলেন, শনাক্তকরণ হয়নি, এমন ১৬০টি লাশ ভুবনেশ্বর এইমস’এর মর্গে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে আগামী ৪২ ঘণ্টা সংরক্ষিত অবস্থায় রাখা হবে। এই সময়ের মধ্যে নিহতদের পরিজনরা এই হাসপাতালে তাদের প্রিয়জনের লাশ সনাক্ত করতে পারবেন। যেগুলি শনাক্ত করা যাবে না সেগুলি মেডিকেল গাইড অনুযায়ী সৎকার করে ফেলবে উড়িশা সরকার।
ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনাগ্রস্থ করমন্ডল এক্সপ্রেস ও যশবন্তপুর-হামসাফর এক্সপ্রেসের ভ্রমণকারী যাত্রীদের একটি লম্বা তালিকা প্রকাশ করেছে রেলদপ্তর। যে তালিকায় শুধুমাত্র যাত্রীদের নাম, পিএনআর কোড, সিট নম্বর ও ভারতীয় ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা দেখে আলাদা করে ওই যাত্রীর নাগরিকত্ব জানা সম্ভব নয়।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ উপদূতাবাসের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ভারতীয় রেলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, ওই ট্রেন গুলিতে টিকিট বুকিং করার সময় ভ্রমণকারী বাংলাদেশী নাগরিকদের নাগরিকত্বের পরিচয় সম্পর্কিত নথি দেখে তাদের আলাদা করে সেই তথ্য উপদূতাবাসকে জানানোর জন্য। যদিও রেলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।
প্রসঙ্গনিউজবিডি/জে.সি