রশিদ আটকে রাখা হয়, টিউশন ফি দিতে দেরি হলে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়, জননী নার্সিং ইনস্টিটিউটে
বাবার ভিটা মাটি বেচে জননী নার্সিং ইনস্টিটিউট এর মতো প্রতিষ্ঠান করবো: শিক্ষার্থী

- আপডেট সময় : ০৫:৩২:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪ ১৪৪ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নানা অনিয়ম আর দূর্নীতির আখরায় পরিনত হয়েছে রাজশাহীর উপশহরে অবস্থিত জননী নার্সিং ইনস্টিটিউট। নিয়ম নিতির তোয়াক্কা না করেই রিতিমত চলছে শিক্ষা বানিজ্য। নেই অভিজ্ঞ শিক্ষক, প্রশিক্ষনের জন্য নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। নীতিমালা বলছে এ ধরনের ইনিস্টিটিউট স্থাপনের ক্ষেত্রে ৩০ হাজার বর্গ ফুটের ভবন থাকতে হবে অথচ একই ভবনেই চলছে তিনটি প্রতিষ্ঠান।
প্রতি ৪০ জনে এক জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও পুরো কলেজ জুড়ে রয়েছে মাত্র তিনজন শিক্ষক। নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এ্যাবসেন্ট ফি এর নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে দেয়া হয় না কোনো রশিদ। প্রতিবাদ করলেই শিক্ষার্থীদের উপর নেমে আসে নির্যাতন, দেয়া হয় ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি। তবে পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ায় দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও নীপিড়নের প্রতিবাদে জননী নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে এবার রাস্তায় নেমেছে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট নার্সেস ইউনিয়ন রাজশাহী জেলা শাখা।
আজ শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল ১০ টায় নগরীর উপশহর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে জননী নার্সিং ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরা হয়। অভিযোগগুলো হলো, প্রতিষ্ঠানে ৬ মাসের উপরে কোনো প্রিন্সিপাল নেই, বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল অভিজ্ঞ নয়, বর্তমানে লেকচার দেওয়ার মত অভিজ্ঞ শিক্ষক নেই, পর্যাপ্ত ল্যাব নেই, ল্যাবে পর্যাপ্ত ইন্সট্রুমেন্ট নেই, পর্যাপ্ত ক্লাস রুম নেই, কমন রুম নেই, নিজস্ব কোনো বিল্ডিং নেই, কোনো হোস্টেল ব্যবস্থা নেই, একটি বিল্ডিং এ একাধিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়, ইনস্টিটিউটের টিচার প্ল্যান নেই, মাত্র ৩টি টিচার দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হয়, কাজ চালানোর জন্য অধ্যক্ষ টিচার ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়, এ্যাবসেন্ট ফি ছাড়া টিউশন ফি গ্রহন করা হয় না।
রশিদ আটকে রাখা হয়, টিউশন ফি দিতে দেরি হলে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। যেখানে রশিদে ৫০ টাকা প্রতি মাসে জরিমানা লেখা আছে, এ্যাবসেন্ট ফি ১ম বর্ষ ৫০ টাকা এবং ২য় বর্ষ ও ৩য় বর্ষ ২০০ টাকা প্রতি ক্লাস ধার্য করা হয়, ছুটির জন্য সব রকম অসুস্থতার মেডিক্যাল পেপার চাওয়া হয় এবং পেপার দেয়ার পরও অনেক সময় ছুটি দেওয়া হয় না, ২য় বর্ষ সিলেবাস শেষ না করেই জোর পূর্বক পরীক্ষা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, নিয়ম বহির্ভূত টাকার অফিসিয়াল নোটিশ চাইলে এবং মানি রিচিব চাইলে পার্সোনালি এমডি স্যারের রুমে ডেকে ফরমেটিভ এ ফেইল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়, কোনো ল্যাব ক্লাস নেওয়া হয় না, কোনো ল্যাব টিচার নেই, ত্রুটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে ফরমেটিভ মার্ক না দেওয়ার হুমকি সহ বার্ষিক পরিক্ষার ফর্ম পূরণ করতে না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
এমনকি গার্ডিয়ানদের সাথে অকথ্য ভাষায় কথা বলা, অপমান এবং স্টুডেন্টদেরকেও মারার হুমকি দেয়া হয়। যার কারনে স্টুডেন্টরা কথা বলতে ভয় পায়, প্রতি ক্লাসের হাজিরাতে ২০০ টাকা এ্যাবসেন্ট ফি নেওয়া হয়, এমন অসহনীয় আর্থিক দন্ড দেয়ার নিয়ম বিএনএমসি তে নেই।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট নার্সেস ইউনিয়ন রাজশাহী জেলার সভাপতি বিপ্লব হাসান, সাধারণ সম্পাদক হাজরা খাতুন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা’র রাকিন আফসার অর্ণব, মুরাদ, প্রথম বর্ষের রুমকি, দ্বিতীয় বর্ষের সুইটি, সুমন আলী, রাব্বানী সহ শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানের বাবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাজেদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর জন্য এমন জরিমানা করা হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো রশিদ প্রদান করা হয় না। এটা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম।
এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, বিধি বহির্ভূতভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান চালাতে দেওয়া হবে না। জননী নার্সিং ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি