ঢাকা ০২:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টানা খরতাপ থেকে স্বস্তি পেতে বৃষ্টির আশায় বিশ্বাস ভরা মন নিয়ে পুরো গ্রাম যেন মেতে উঠে ব্যাঙের বিয়ে দিতে

প্রকৃতিকে খুশি করতে দেয়া হলো ব্যাঙের বিয়ে

খ্রীষ্টফার জয়
  • আপডেট সময় : ০৪:২১:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪ ২৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:


বহু বছরের গ্রামবাংলার সংস্কৃতি হিসেবে পালন করা হচ্ছে ব্যাঙের বিয়ে। মূলত প্রকৃতি যখন রুদ্রমূর্তি ধারণ করে তখনই গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া মানুষ প্রকৃতির উপর আস্থা রেখে ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে থাকে।

টানা খরতাপ থেকে স্বস্তি পেতে বৃষ্টির আশায় বিশ্বাস ভরা মন নিয়ে পুরো গ্রাম যেন মেতে উঠে ব্যাঙের বিয়ে দিতে।

বুধবার (১ মে) গায়ে হলুদের মধ্য দিয়ে প্রতীকী বিয়ের আয়োজন করে রাজশাহীর পবা উপজেলার ভূগরুইল পশ্চিম আদিবাসী গ্রামের মানুষ।

পুরো গ্রামের বাসিন্দারা জাতিতে মাল পাহাড়িয়া জনগোষ্ঠী। তবে তারা খ্রীষ্ট ধর্মের অনুসারী। নিজস্ব রীতিনীতি মেনে বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যাঙের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ।

গ্রামের একমাত্র কাটেকিস্ট মাস্টার অঞ্জলী বিশ্বাসসহ কয়েকজনের যৌথ প্রচেষ্টায় এই আয়োজন করা হয়। এ জন্য বুধবার বিকেলে তারা গ্রামের এক শুকনো পুকুরপাড় থেকে একটি ছেলে ব্যাঙ (শিমুল) ও একটি মেয়ে ব্যাঙ (মেঘলা) ধরে আনেন। সন্ধ্যায় গ্রামের গীর্জা মাঠে সাজানো হয় ছাতনাতলা । যেখানে বর ও কনের জন্য প্রস্তুত করা হয় গায়ে হলুদের মঞ্চ ও সকল ধরণের আনুষ্ঠানিকতা সেখানে করা হয়।

গায়ে হলুদের পর কনেকে রাখা হয়েছিল গ্রামের আলফন্স বিশ্বাসের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামের নারী ও শিশু-কিশোরীরা নেচে-গেয়ে তাদের কৃষ্টিগত সকল ধরণের আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন। এরপর সবাই বাদ্যের তালে নাচতে ও গাইতে গাইতে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠদের সালাম করে বরযাত্রী হিসেবে কণে আনতে রওনা দেয়। সঙ্গে যান বরের প্রতীকী বাবা সৈকত বিশ্বাস আর প্রতীকী মা ভাবনা বিশ্বাস নামের দুই শিশু।

আলফন্স বিশ্বাসের বাড়ি গেলে পাহাড়িয়া কৃষ্টির যে সকল নিয়ম কানুন রয়েছে এই প্রতীকী বিয়েতে তা পালন করে বরের বাবা-মায়ের পা ধুইয়ে দেওয়া হয় পানি দিয়ে। তারপর সবাই বাড়িতে কনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কনে সাজানো শেষ হলে অঞ্জলী বিশ্বাস যাজক সেজে বর-কনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন।

বিয়ে পড়ানো শেষে বর শিমুলের হাত দিয়ে কনে মেঘলার মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া হয়। খাওয়া-দাওয়ার পর শেষ হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। পরে বর-কনেকে একটি পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিয়ের আয়োজক অঞ্জলী বিশ্বাস বলেন, ‘টানা খরায় পথঘাট পুড়ে যাচ্ছে। সব ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। পশুপাখি ও অন্যান্য প্রাণী কষ্ট পাচ্ছে পানির অভাবে। আমরা বিশ্বাস করি ব্যাঙের বিয়ে দিলে ঈশ্বরের আর্শিবাদে বৃষ্টি হবে। তাই আমাদের সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী দুই কোলা ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা পূর্ব থেকেই আমরা দেখে আসছি। বড় হয়ে এখন আমরাও প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করতে এই ভক্তিপূর্ণ আয়োজন।’


প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

টানা খরতাপ থেকে স্বস্তি পেতে বৃষ্টির আশায় বিশ্বাস ভরা মন নিয়ে পুরো গ্রাম যেন মেতে উঠে ব্যাঙের বিয়ে দিতে

প্রকৃতিকে খুশি করতে দেয়া হলো ব্যাঙের বিয়ে

আপডেট সময় : ০৪:২১:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:


বহু বছরের গ্রামবাংলার সংস্কৃতি হিসেবে পালন করা হচ্ছে ব্যাঙের বিয়ে। মূলত প্রকৃতি যখন রুদ্রমূর্তি ধারণ করে তখনই গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া মানুষ প্রকৃতির উপর আস্থা রেখে ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে থাকে।

টানা খরতাপ থেকে স্বস্তি পেতে বৃষ্টির আশায় বিশ্বাস ভরা মন নিয়ে পুরো গ্রাম যেন মেতে উঠে ব্যাঙের বিয়ে দিতে।

বুধবার (১ মে) গায়ে হলুদের মধ্য দিয়ে প্রতীকী বিয়ের আয়োজন করে রাজশাহীর পবা উপজেলার ভূগরুইল পশ্চিম আদিবাসী গ্রামের মানুষ।

পুরো গ্রামের বাসিন্দারা জাতিতে মাল পাহাড়িয়া জনগোষ্ঠী। তবে তারা খ্রীষ্ট ধর্মের অনুসারী। নিজস্ব রীতিনীতি মেনে বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যাঙের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ।

গ্রামের একমাত্র কাটেকিস্ট মাস্টার অঞ্জলী বিশ্বাসসহ কয়েকজনের যৌথ প্রচেষ্টায় এই আয়োজন করা হয়। এ জন্য বুধবার বিকেলে তারা গ্রামের এক শুকনো পুকুরপাড় থেকে একটি ছেলে ব্যাঙ (শিমুল) ও একটি মেয়ে ব্যাঙ (মেঘলা) ধরে আনেন। সন্ধ্যায় গ্রামের গীর্জা মাঠে সাজানো হয় ছাতনাতলা । যেখানে বর ও কনের জন্য প্রস্তুত করা হয় গায়ে হলুদের মঞ্চ ও সকল ধরণের আনুষ্ঠানিকতা সেখানে করা হয়।

গায়ে হলুদের পর কনেকে রাখা হয়েছিল গ্রামের আলফন্স বিশ্বাসের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামের নারী ও শিশু-কিশোরীরা নেচে-গেয়ে তাদের কৃষ্টিগত সকল ধরণের আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন। এরপর সবাই বাদ্যের তালে নাচতে ও গাইতে গাইতে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠদের সালাম করে বরযাত্রী হিসেবে কণে আনতে রওনা দেয়। সঙ্গে যান বরের প্রতীকী বাবা সৈকত বিশ্বাস আর প্রতীকী মা ভাবনা বিশ্বাস নামের দুই শিশু।

আলফন্স বিশ্বাসের বাড়ি গেলে পাহাড়িয়া কৃষ্টির যে সকল নিয়ম কানুন রয়েছে এই প্রতীকী বিয়েতে তা পালন করে বরের বাবা-মায়ের পা ধুইয়ে দেওয়া হয় পানি দিয়ে। তারপর সবাই বাড়িতে কনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কনে সাজানো শেষ হলে অঞ্জলী বিশ্বাস যাজক সেজে বর-কনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন।

বিয়ে পড়ানো শেষে বর শিমুলের হাত দিয়ে কনে মেঘলার মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দেওয়া হয়। খাওয়া-দাওয়ার পর শেষ হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। পরে বর-কনেকে একটি পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিয়ের আয়োজক অঞ্জলী বিশ্বাস বলেন, ‘টানা খরায় পথঘাট পুড়ে যাচ্ছে। সব ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। পশুপাখি ও অন্যান্য প্রাণী কষ্ট পাচ্ছে পানির অভাবে। আমরা বিশ্বাস করি ব্যাঙের বিয়ে দিলে ঈশ্বরের আর্শিবাদে বৃষ্টি হবে। তাই আমাদের সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী দুই কোলা ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা পূর্ব থেকেই আমরা দেখে আসছি। বড় হয়ে এখন আমরাও প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করতে এই ভক্তিপূর্ণ আয়োজন।’


প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি