ঢাকা ০৬:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সীমান্তে গোলাগুলির আওয়াজ: সর্বোচ্চ সতর্কতায় বিজিবি-কোস্টগার্ড

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:০৮:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৪ ৯ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:


মিয়ানমারের রাখাইনে আবারও গোলাগুলি চলছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দিবাগত রাত থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন দ্বীপ সীমান্তে থেমে থেমে ভারী মর্টারশেলের শব্দ শুনেছেন স্থানীয়রা। এতে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের সন্দেহ, আরাকান আর্মি আরও অগ্রসর হলে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) বা সেনাবাহিনীর সদস্যরা আবার বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে প্রবেশ করতে পারে।

ওপারের যুদ্ধের কারণে টেকনাফের উত্তরপাড়া, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, হ্নীলা, মোলভীপাড়া, ওয়াব্রাং, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া এলাকায় ওপার থেকে থেমে থেমে গুলি ও মর্টারশেলের শব্দ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে রাখাইনের কুমিরহালি, নাইচদং, কোয়াংচিগং, শিলখালী, নাফপুরাসহ সেন্টমার্টিন দ্বীপের ওপারে হাসসুরাসহ কয়েকটি গ্রামে গৃহযুদ্ধ চলছে। ওপারের গোলার বিকট শব্দে কাঁপছে এপার।

সীমান্তঘেঁষা শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘‘ঈদের রাত (বৃহস্পতিবার) থেকে মিয়ানমারে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। সেখানকার গোলার বিকট শব্দে আমাদের ঘরবাড়ি কাঁপছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। শব্দ এত তীব্র যে নারী-শিশুরা ঘুমাতে পারছে না। এভাবেই আতঙ্কে দিন পার করছি আমরা।’’

তবে রাখাইনে চলমান যুদ্ধের কারণে নতুন করে বাংলাদেশে যাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘রাখাইনে গোলাগুলি চলছে। যে কারণে এপারে বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সীমান্তবর্তী লোকজনের ভয়ের কোনো কারণ নেই। সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি এ সমস্যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে, সে জন্য সীমান্তে টহল জোরদার রয়েছে।’’

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় একটা অংশই পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। ২০২৩ সাল থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) গোলাগুলির ঘটনা ঘটে আসছে। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। যদিও গোলাগুলি হলে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা সীমান্তে নজর রাখছি পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। তবে সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ যাতে আতঙ্কিত না হয়, সে জন্য আমরা খোঁজ-খবর রাখছি। এ ছাড়া নাফ নদ সীমান্তে আমাদের বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’’

এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসে বিজিপি সদস্যসহ ৩৩০ জন। এর মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।


প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সীমান্তে গোলাগুলির আওয়াজ: সর্বোচ্চ সতর্কতায় বিজিবি-কোস্টগার্ড

আপডেট সময় : ০৩:০৮:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৪

নিউজ ডেস্ক:


মিয়ানমারের রাখাইনে আবারও গোলাগুলি চলছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দিবাগত রাত থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন দ্বীপ সীমান্তে থেমে থেমে ভারী মর্টারশেলের শব্দ শুনেছেন স্থানীয়রা। এতে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের সন্দেহ, আরাকান আর্মি আরও অগ্রসর হলে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) বা সেনাবাহিনীর সদস্যরা আবার বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে প্রবেশ করতে পারে।

ওপারের যুদ্ধের কারণে টেকনাফের উত্তরপাড়া, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, হ্নীলা, মোলভীপাড়া, ওয়াব্রাং, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া এলাকায় ওপার থেকে থেমে থেমে গুলি ও মর্টারশেলের শব্দ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে রাখাইনের কুমিরহালি, নাইচদং, কোয়াংচিগং, শিলখালী, নাফপুরাসহ সেন্টমার্টিন দ্বীপের ওপারে হাসসুরাসহ কয়েকটি গ্রামে গৃহযুদ্ধ চলছে। ওপারের গোলার বিকট শব্দে কাঁপছে এপার।

সীমান্তঘেঁষা শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘‘ঈদের রাত (বৃহস্পতিবার) থেকে মিয়ানমারে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। সেখানকার গোলার বিকট শব্দে আমাদের ঘরবাড়ি কাঁপছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। শব্দ এত তীব্র যে নারী-শিশুরা ঘুমাতে পারছে না। এভাবেই আতঙ্কে দিন পার করছি আমরা।’’

তবে রাখাইনে চলমান যুদ্ধের কারণে নতুন করে বাংলাদেশে যাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘রাখাইনে গোলাগুলি চলছে। যে কারণে এপারে বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সীমান্তবর্তী লোকজনের ভয়ের কোনো কারণ নেই। সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি এ সমস্যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে, সে জন্য সীমান্তে টহল জোরদার রয়েছে।’’

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় একটা অংশই পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। ২০২৩ সাল থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) গোলাগুলির ঘটনা ঘটে আসছে। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। যদিও গোলাগুলি হলে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা সীমান্তে নজর রাখছি পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। তবে সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ যাতে আতঙ্কিত না হয়, সে জন্য আমরা খোঁজ-খবর রাখছি। এ ছাড়া নাফ নদ সীমান্তে আমাদের বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’’

এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসে বিজিপি সদস্যসহ ৩৩০ জন। এর মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।


প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি