তানোরে অবৈধ চুলের ব্যবসায় কোটিপতি সেলিম
- আপডেট সময় : ০১:৫৯:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অগাস্ট ২০২৩ ১১৭ বার পড়া হয়েছে
তানোর প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোরে কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পত্র ছাড়াই অবৈধ চুলের ব্যবসা করেই কোটিপতি বনে গেছেন সেলিম নামের এক ব্যক্তি বলে অভিযোগ উঠেছে। সে মাদারিপুর বাজারে এক বাসা ভাড়া নিয়ে চুল দিয়ে বিভিন্ন প্রকার নকল চুল তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাপ্লাই করে আসছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শুধু ওই বাড়িতেই সীমাবদ্ধ না উপজেলা বিভিন্ন গ্রামে মহিলাদের সল্প মুজুরি দিয়ে কাজ করিয়ে নেই বলেও অহরহ অভিযোগ রয়েছে সেলিমের বিরুদ্ধে। এতে করে যত্রতত্র পড়ে থাকছে চুল। ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মাদারিপুর বাজারের পশ্চিমে ধানোরা যাওয়ার রাস্তার দক্ষিণে দ্বিতলা ফ্লাট বাড়ী ভাড়া নিয়ে চুলের কাজ করে থাকেন। বাড়িটিতে অপরিচিত কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়না। কিছু পুরুষ খালি গায়ে কাজ করছিল এবং তাদের সাথে মহিলারাও কাজ করছিল। কোন ধরনের পরিবেশ রক্ষা না করেই চুলের কাজ করছেন। কাজ করা অবস্থায় গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করা হয়।
কাজ করা যুবকরা জানান, কেউ জট লাগা চুল সোজা করেন। কেউ ক্যাপ, কেউ কেশসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে থাকেন। এসব তৈরিকৃত চুলের বিভিন্ন জিনিস বস্তায় ভরে রাজধানী সহ বিভিন্ন জায়গায় সাপ্লায় দিয়ে থাকেন সেলিম।
স্থানীয়রা জানান, বাদপড়া চুল মাটির নিচে পুতে না রেখে রাস্তার ধারে বা জমিতে ফেলে রাখা হয়। ছোট বাচ্চারা চুল কুড়িয়ে পুনরায় গ্রামে গিয়ে বিক্রি করে জিনিস খান। আবার অনেক চুল পড়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একব্যক্তি জানান, সেলিমের বাড়ি নিয়ামতপুর উপজেলার নাকলগ্রামে। তার পিতার নাম আজিজুল হক। তারা পরিবারিক ভাবে খুব অবস্থাশালী বা টাকা ওয়ালা না। তার ভায়েরা গ্রামে গ্রামে সাইকেল নিয়ে ভঙচঙের ব্যবসা করে থাকেন। ভঙচঙের ব্যবসা বলতে গ্রামে গ্রামে সাইকেল নিয়ে ছোট বাচ্চাদের নানা ধরনের খেলনা বিক্রি করেন চুলের বিনিময়ে।
সেলিমও এক সময় সাইকেল নিয়ে ব্যবসা করত। হঠাৎই চীন দেশের লোকের সাথে সম্পর্ক হয় সেলিমের। বিগত ৭/৮ বছর ধরে সেলিম চুলের কারখানা তৈরি করে ভাগ্য বদল করলেও তার ভায়েদের ভাগ্য তেমন ভাবে পরিবর্তন হয়নি। ব্যবসা করা অবস্থায় চীনের মহাজন মারা গেলে ভাগ্য খুলে যায় সেলিমের। তার কারখানায় অনেক পুরুষ মহিলা কাজ করলেও অপরিচিত ব্যক্তিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেলিম বর্তমানে কত টাকার মালিক কেউ জানেন না।
রাতের আধারে ট্রাকে করে বস্তায় ভরে দেশ বিদেশে রপ্তানি করে থাকেন চুল। সেলিম মাদারিপুর বাজারের দক্ষিণে মুল রাস্তার পশ্চিমে ফ্লাট বাড়ি তৈরি করছেন। বাড়ি তৈরির জন্য রাস্তার ছোট তালগাছ ও বড় শিশু গাছের মাথা কর্তন করেছেন। সেলিম নীল কালারের এপাসি বাইক নিয়ে চলাচল করে থাকেন।
ব্যবসার বিষয়ে জানতে সেলিমের ব্যক্তিগত ০১৭৩২-৬৮৯৮৮০ মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। কামারগাঁ ইউনিয়ন (ইউপির) চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি ফরহাদের কাছে সেলিমের চুলের ব্যবসা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এবিষয়ে আমার তেমন ভাবে জানা নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নাকি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার জানা মতে কোন ট্রেড লাইসেন্স নেয় না। তবে ট্রেড লাইসেন্সের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চুলের ব্যবসা করতে হলে ছাড়পত্র নিতে হবে। চুলের ব্যবসার জন্য কেউ ছাড়পত্র নেয়নি। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গনিউজবিডি/জে.সি