ঢাকা ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
‘স্বৈরাচারের দোসরদের নয়, জুলাই বিপ্লবে সহায়তাকারী রুয়েট শিক্ষকদের মধ্য থেকে ভিসি চাই’ বিএমডিএর নতুন চেয়ারম্যান হলেন আসাদুজ্জামান রাবিতে সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় ২৪ উদযাপন উপলক্ষে গরু খাসি নিয়ে বিজয় মিছিল করেছে জিয়া হলের শিক্ষার্থীরা রাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে তালা ; ৪দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গৃহবধুর মৃত্যু দুই বছরের মধ্যে বিলীন হবে ইসরায়েলের অস্তিত্ব : ট্রাম্প ঢাবি নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহর ১৪ প্রস্তাব ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী অঞ্চল পশ্চিমের সাথী সমাবেশ অনুষ্ঠিত  রামেবি ভিসির নিয়োগে নার্সিং শিক্ষার্থীদের আনন্দ মিছিল, ফুলেল শুভেচ্ছা-সাক্ষাৎ

কক্সবাজারে হোটেলে আটকা অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৪২:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেস্ক:


দুইদিনের টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি জেলার ৯ উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। অতিবৃষ্টি ও ঢলের কারণে পাহাড় ধসে দুই উপজেলায় মারা গেছেন ছয়জন।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে আজ শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা ২০১৫ সালের পর একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এতে পাহাড় ধস এবং বন্যার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বর্ষণ অব্যাহত থাকায় কক্সবাজার শহরের পর্যটনজোনের কলাতলী, প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, টেকপাড়া, কালুরদোকান, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, নুনিয়ারছড়া, সমিতিপাড়া, বাসটার্মিনাল এলাকাসহ বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে শহরের যান চলাচল বিঘ্ন সৃষ্টির পাশাপাশি জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

সৈকত এলাকার হোটেল-রিসোর্ট, কটেজ জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকেরা। আজ শুক্রবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন হোটেলকক্ষে। জলাবদ্ধতার কারণে তারা কোথাও বের হতে পারছেন না। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লাল নিশানা উড়িয়ে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে।

কক্সবাজার হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‌‘জলাবদ্ধতার কারণে হোটেল-মোটেল জোনের ১৮টি সড়ক ডুবে গেছে। আজ ৫ শতাধিক হোটেলে অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক অলস বসে থেকে সময় কাটাচ্ছেন। ভারী বর্ষণের কারণে তারা হোটেল থেকে কোথাও যেতে পারছেন না। অনেকে হোটেল বুকিং বাতিল করে গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন।’

এদিকে, জেলার সদর, রামু, উখিয়া, চকরিয়া ও টেকনাফে বন্যার ঝু্ঁকি দেখা দিয়েছে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিবিধিদের সূত্র জানা গেছে, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদী এবং খাল ও ছড়াগুলোতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বার্তায় জানানো হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলো ঝোড়ো হাওয়া বইয়ে যেতে পারে। কক্সবাজারসহ চার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা আজ শুক্রবার ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন জানান, ভারী বর্ষণে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় কাঁচা ঘরবাড়ি ও পানের বরজ নষ্ট হয়েছে। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক ও সিপিপি (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। খোলা রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরীর জানান, ভারী বর্ষণে উপজেলার ছয় ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

কক্সবাজারে সদর উপজেলা এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়। অপরদিকে উখিয়া উপজেলার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়। ধসে পড়েছে তিনটি বাড়ি-ঘর।

বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে ঝিলংজা ইউনিয়নের ২ ওয়ার্ডের দক্ষিণ ডিককুল গ্রাম এবং উখিয়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, জেলার ৮ উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসতে মাইকিং অব্যাহত আছে। পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চারটি পৃথক টিম মাঠে কাজ করছে। সদর উপজেলায় পাহাড় ধসে নিহত তিনজনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।


প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কক্সবাজারে হোটেলে আটকা অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক

আপডেট সময় : ০৩:৪২:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিউজ ডেস্ক:


দুইদিনের টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি জেলার ৯ উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। অতিবৃষ্টি ও ঢলের কারণে পাহাড় ধসে দুই উপজেলায় মারা গেছেন ছয়জন।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে আজ শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা ২০১৫ সালের পর একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এতে পাহাড় ধস এবং বন্যার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বর্ষণ অব্যাহত থাকায় কক্সবাজার শহরের পর্যটনজোনের কলাতলী, প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, টেকপাড়া, কালুরদোকান, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, নুনিয়ারছড়া, সমিতিপাড়া, বাসটার্মিনাল এলাকাসহ বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে শহরের যান চলাচল বিঘ্ন সৃষ্টির পাশাপাশি জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

সৈকত এলাকার হোটেল-রিসোর্ট, কটেজ জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকেরা। আজ শুক্রবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন হোটেলকক্ষে। জলাবদ্ধতার কারণে তারা কোথাও বের হতে পারছেন না। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লাল নিশানা উড়িয়ে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে।

কক্সবাজার হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‌‘জলাবদ্ধতার কারণে হোটেল-মোটেল জোনের ১৮টি সড়ক ডুবে গেছে। আজ ৫ শতাধিক হোটেলে অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক অলস বসে থেকে সময় কাটাচ্ছেন। ভারী বর্ষণের কারণে তারা হোটেল থেকে কোথাও যেতে পারছেন না। অনেকে হোটেল বুকিং বাতিল করে গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন।’

এদিকে, জেলার সদর, রামু, উখিয়া, চকরিয়া ও টেকনাফে বন্যার ঝু্ঁকি দেখা দিয়েছে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিবিধিদের সূত্র জানা গেছে, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদী এবং খাল ও ছড়াগুলোতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বার্তায় জানানো হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলো ঝোড়ো হাওয়া বইয়ে যেতে পারে। কক্সবাজারসহ চার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা আজ শুক্রবার ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন জানান, ভারী বর্ষণে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় কাঁচা ঘরবাড়ি ও পানের বরজ নষ্ট হয়েছে। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক ও সিপিপি (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। খোলা রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরীর জানান, ভারী বর্ষণে উপজেলার ছয় ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

কক্সবাজারে সদর উপজেলা এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়। অপরদিকে উখিয়া উপজেলার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়। ধসে পড়েছে তিনটি বাড়ি-ঘর।

বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে ঝিলংজা ইউনিয়নের ২ ওয়ার্ডের দক্ষিণ ডিককুল গ্রাম এবং উখিয়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, জেলার ৮ উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসতে মাইকিং অব্যাহত আছে। পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চারটি পৃথক টিম মাঠে কাজ করছে। সদর উপজেলায় পাহাড় ধসে নিহত তিনজনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।


প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি