শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে নেই: জবি রেজিস্ট্রার
- আপডেট সময় : ১১:৫৩:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪ ৬৩ বার পড়া হয়েছে
নিউজ ডেস্ক:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবার মামলা করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আইনুল ইসলাম।
শনিবার (১৬ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় নাম আসা শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিককে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আইনুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তারের নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে নেই। গ্রেপ্তারটা হলো আইনের বিষয়। তার পরিবার থেকে যদি মামলা করে, তাহলে পুলিশ মামলা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে। প্রেস রিলিজে এটা দেওয়া ঠিক হয়নি। গতকাল শুক্রবার রাতে আইন সংস্থার লোকজন ছিল, তাদের হয়ত বলেছে। এর বেশি কিছু নয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও তথ্য প্রকাশনা বিভাগের উপ পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ আলম স্বাক্ষিরত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার সুইসাইড নোটে দেওয়া আইন বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের (১৪তম ব্যাচের) অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকি আম্মানকে (আইডি নং- বি ১৮০৫০১০১৬) সাময়িক বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেপ্তারে নির্দেশ এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রক্টরিয়াল বডি থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে শনিবার সকালে অবন্তিকার জানাজায় অংশ নিতে বিভাগের সহপাঠীরা তার গ্রামের বাড়ি গেছেন। আর রাতে কুমিল্লায় গেছে প্রক্টরিয়াল বডির একটি দলও।
গ্রেফতারের নির্দেশনা দিয়ে জবির জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
এছাড়া ঘটনা তদন্তে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার দাসকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করার কথাও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।
অবন্তিকার মৃত্যুর পর অভিযোগের আঙুল ওঠা তার সহপাঠী ও শিক্ষককে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাত ১টায় উপাচার্য সাদেকা হালিম ক্যাম্পাসে গেলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আটকে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তখন সাদেকা হালিম শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় ঘোষণা দেন। এ সময় উপাচার্য দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দেন।
এর আগে, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জগন্নাথের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা কুমিল্লায় নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যার আগে সহপাঠী শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের দায়ী করে ফেইসবুকে অবন্তিকা লিখে যান-
আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন ও অনলাইনে থ্রেটের (হুমকি) উপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানানভাবে ভয় দেখায়, আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার।
আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস (বিচার) পাবো না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতীয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেসে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে।
আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায় সেটা কুমিল্লার কারো সৎ সাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগ এর প্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে “…. (প্রকাশ অযোগ্য শব্দ) তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেনো? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে?
আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিল। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তো থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া, আর সো কিনা আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না। আমি উপাচার্য সাদোকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম।
আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার উপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।
প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি