ঢাকা ১২:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনে জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ‘স্বৈরাচারের দোসরদের নয়, জুলাই বিপ্লবে সহায়তাকারী রুয়েট শিক্ষকদের মধ্য থেকে ভিসি চাই’ বিএমডিএর নতুন চেয়ারম্যান হলেন আসাদুজ্জামান রাবিতে সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় ২৪ উদযাপন উপলক্ষে গরু খাসি নিয়ে বিজয় মিছিল করেছে জিয়া হলের শিক্ষার্থীরা রাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে তালা ; ৪দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গৃহবধুর মৃত্যু দুই বছরের মধ্যে বিলীন হবে ইসরায়েলের অস্তিত্ব : ট্রাম্প ঢাবি নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহর ১৪ প্রস্তাব ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী অঞ্চল পশ্চিমের সাথী সমাবেশ অনুষ্ঠিত 

জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রামেকে দুই বোনের মৃত্যু

খ্রীষ্টফার জয়
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৭:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ১০০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:


হঠাৎ করে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চার দিনের ব্যবধানে রাজশাহীতে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। এ দুই শিশুর মধ্যে বড় জন শনিবার বিকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। চার দিন আগে বুধবার ছোটজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। শিশু দুটির নাম মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া।

ভাইরাসজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণ করছেন চিকিৎসকরা। তবে কোন ভাইরাসে তারা আক্রান্ত হয়েছিল তা নিশ্চিত হতে পারেননি। এমন অবস্থায় দুই শিশুর বাবা-মাকে কোথাও যেতে না দিয়ে হাসপাতালেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

তাদের বাবা মনজুর রহমান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন।

হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের চিকিৎসক আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ধারণা করা হচ্ছে, বাচ্চা দুটো নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও তাদের বাবা-মা জানিয়েছেন, তারা খেজুর রস খায়নি। তবে কুড়িয়ে পাওয়া বরই না ধুয়ে খেয়েছিল। এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোন ভাইরাসও হতে পারে। হাসপাতালে মারা যাওয়া মারিশা আর তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শনিবার বিকাল ৫টার দিকে আইসিইউতে মারা যায় বড় মেয়ে মাশিয়া। এরপর শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকরা। তাদের রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে।

বিকালে স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পর দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। বুধবার বিকালে ছোট মেয়ে মারিশা মারা যাওয়ার পর তাকেও সেখানে দাফন করা হয়েছিল।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিশুদের মা পলি খাতুন বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিল। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা ও মাশিয়া। সেদিন তারা ভালই ছিল। একসঙ্গে খেলেছে।

পরদিন বুধবার বেলা ১১টার দিকে ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। বার বার পানি খাচ্ছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সম্মিলিত সামরিক হাসাপাতালে (সিএমএইচ) আসছিলেন।

মাইক্রোবাসেও মারিশা বুকের দুধ খায়। শহরে ঢোকার আগে কাটাখালী এলাকায় মায়ের বুকেই মারিশা মারা যায়। সিএমএইচে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, সে আর নেই। এরপর গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুরে নিয়ে বাবা-মা তার মরদেহ দাফন করা হয়। পরিবারের সবাই তখন দুর্গাপুরেই ছিলেন।

পলি খাতুন বলেন, শুক্রবার সকালে দুর্গাপুরের বাড়িতে মাশিয়ারও জ্বর আসে। শুরু হয় বমি। দ্রুতই তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহীতে সিএমএইচে আনা হয়। রাতে মাশিয়ারও পুরো শরীরে ছোপ ছোট কাল দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাকে দ্রুতই আইসিইউতে ভর্তি নেন। বিকালে মাশিয়াও মারা যায়।”

ছোট মেয়ে মাশিয়ার শরীরেও ছোপ ছোপ কাল দাগ উঠছিল জানিয়ে পলি খাতুন বলেন, “মারিশার একই রকম কাল দাগ উঠতে শুরু করে মৃত্যুর আগের রাতে। এ রকম দাগ আমি আগে কখনও দেখিনি। গরম তেল শরীরে পড়লে যে ধরনের দাগ হয়, তা অনেকটা সে রকমের। অসুস্থ হওয়ার পরে দুই বোনই বার বার পানি খাচ্ছিল।”

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা কামাল বলেন, “এ বছর এ পর্যন্ত রাজশাহীতে কেউ নিপাহ ভাইরাসে মারা গিয়েছেন, এ রকম প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এটা সঠিক যে, বাচ্চা দুটো কোনো একটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছে। অসুস্থ হওয়ার আগে এটা বোঝা যায়নি।

“আবার অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য খুব বেশি সময়ও পাওয়া যায়নি। তাই বাচ্চা দুটোর বাবা-মাকে বাসায় যেতে দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।


প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রামেকে দুই বোনের মৃত্যু

আপডেট সময় : ০৪:৫৭:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:


হঠাৎ করে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চার দিনের ব্যবধানে রাজশাহীতে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। এ দুই শিশুর মধ্যে বড় জন শনিবার বিকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। চার দিন আগে বুধবার ছোটজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। শিশু দুটির নাম মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া।

ভাইরাসজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণ করছেন চিকিৎসকরা। তবে কোন ভাইরাসে তারা আক্রান্ত হয়েছিল তা নিশ্চিত হতে পারেননি। এমন অবস্থায় দুই শিশুর বাবা-মাকে কোথাও যেতে না দিয়ে হাসপাতালেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

তাদের বাবা মনজুর রহমান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন।

হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের চিকিৎসক আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ধারণা করা হচ্ছে, বাচ্চা দুটো নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও তাদের বাবা-মা জানিয়েছেন, তারা খেজুর রস খায়নি। তবে কুড়িয়ে পাওয়া বরই না ধুয়ে খেয়েছিল। এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোন ভাইরাসও হতে পারে। হাসপাতালে মারা যাওয়া মারিশা আর তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শনিবার বিকাল ৫টার দিকে আইসিইউতে মারা যায় বড় মেয়ে মাশিয়া। এরপর শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকরা। তাদের রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে।

বিকালে স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পর দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। বুধবার বিকালে ছোট মেয়ে মারিশা মারা যাওয়ার পর তাকেও সেখানে দাফন করা হয়েছিল।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিশুদের মা পলি খাতুন বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিল। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা ও মাশিয়া। সেদিন তারা ভালই ছিল। একসঙ্গে খেলেছে।

পরদিন বুধবার বেলা ১১টার দিকে ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। বার বার পানি খাচ্ছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সম্মিলিত সামরিক হাসাপাতালে (সিএমএইচ) আসছিলেন।

মাইক্রোবাসেও মারিশা বুকের দুধ খায়। শহরে ঢোকার আগে কাটাখালী এলাকায় মায়ের বুকেই মারিশা মারা যায়। সিএমএইচে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, সে আর নেই। এরপর গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুরে নিয়ে বাবা-মা তার মরদেহ দাফন করা হয়। পরিবারের সবাই তখন দুর্গাপুরেই ছিলেন।

পলি খাতুন বলেন, শুক্রবার সকালে দুর্গাপুরের বাড়িতে মাশিয়ারও জ্বর আসে। শুরু হয় বমি। দ্রুতই তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহীতে সিএমএইচে আনা হয়। রাতে মাশিয়ারও পুরো শরীরে ছোপ ছোট কাল দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাকে দ্রুতই আইসিইউতে ভর্তি নেন। বিকালে মাশিয়াও মারা যায়।”

ছোট মেয়ে মাশিয়ার শরীরেও ছোপ ছোপ কাল দাগ উঠছিল জানিয়ে পলি খাতুন বলেন, “মারিশার একই রকম কাল দাগ উঠতে শুরু করে মৃত্যুর আগের রাতে। এ রকম দাগ আমি আগে কখনও দেখিনি। গরম তেল শরীরে পড়লে যে ধরনের দাগ হয়, তা অনেকটা সে রকমের। অসুস্থ হওয়ার পরে দুই বোনই বার বার পানি খাচ্ছিল।”

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা কামাল বলেন, “এ বছর এ পর্যন্ত রাজশাহীতে কেউ নিপাহ ভাইরাসে মারা গিয়েছেন, এ রকম প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এটা সঠিক যে, বাচ্চা দুটো কোনো একটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছে। অসুস্থ হওয়ার আগে এটা বোঝা যায়নি।

“আবার অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য খুব বেশি সময়ও পাওয়া যায়নি। তাই বাচ্চা দুটোর বাবা-মাকে বাসায় যেতে দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।


প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি