ঢাকা ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাল্টে গেলে দৃষ্টিভঙ্গি, নিরাপত্তা হবে নারী সঙ্গী

মিখায়েল টুডু
  • আপডেট সময় : ০৩:৪৮:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০২৩ ১৯৭ বার পড়া হয়েছে

পাল্টে গেলে দৃষ্টিভঙ্গি, নিরাপত্তা হবে নারী সঙ্গী

মাইকেল টুডু, ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ

মহান পরম করুণাময় তাঁর অসীম ভালবাসা দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ করে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ হচ্ছে প্রাণীকুলের শ্রেষ্ঠ জীব কারণ তার বোধ শক্তি আছে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় মানব সৃষ্টির অর্ধেক নর অর্ধেক নারী। বৈশিষ্ট্যগত ভাবে দেখলে নারী ও পুরুষের মধ্যে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। কেমব্রিজ অভিধান অনুযায়ী -একজন পুরুষ হচ্ছেন তিনি, যিনি নিজেকে পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং সেভাবে জীবন যাপন করেন। ঠিক তেমনি একজন নারী হচ্ছেন তিনি, যিনি নিজেকে নারী হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং সেভাবে জীবন যাপন করেন।

নারী এবং পুরুষ হচ্ছে একে অপরের পরিপূরক। সব কিছুতেই নারী পুরুষের সমান ভুমিকা রয়েছে। কবির ভাষায়- ”বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,অর্ধেক তার নর।”একজন নারী কারো মা,কারো বোন, কারো স্ত্রী। একজন নারীর আদর – সোহাগ – ভালবাসা পাবার জন্য একজন পুরুষের হৃদয় ব্যাকুল হয়ে থাকে।কিন্তু আমাদের প্রিয় পুরুষশাসিত সমাজে একজন নারী সঠিক মূল্যায়ন পেয়েছে কি না,আদর, সোহাগ, ভালবাসার প্রতিদানে সমভাবে শ্রদ্ধা ভালবাসা পেয়েছে কি না,সঠিক যত্ন বা মর্যাদা পেয়েছে কি না – তা মনে রাখার প্রয়োজন আমাদের একেবারে থাকে না।কারণ পুরুষশাসিত সমাজে নারী মাত্রই ভোগের পণ্য।

স্রষ্টা নারীকে পুরষের পরিপূরক করে সৃষ্টি করলেন আর পুরুষ নারীকে পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে দিল।কারণ নারী হচ্ছে অবলা জাতি।আসল কারণ হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা।হায় রে! পুরুষশাসিত সমাজ, কোথায় আমাদের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক।এজন্য আমরা কখনো অনুধাবন করার চেষ্টা করি না, আমাদের নারীরা কেমন আছে।একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে বর্তমানে নারী সমাজ কেমন শোচনীয় অবস্থায় আছে। যদি ধরি মৌলিক অধিকার বা মানবাধিকারের কথা ধরি তাহলে দেখা যাবে সেখানে কত অসংগতি। অর্থাৎ একজন নারী তার অধিকার থেকে সে সব সময় বঞ্চিত।

পরিবারে তার ইচ্ছে বা পছন্দের কোন মূল্য নেই। আদর ভালোবাসা পাবার ক্ষেত্রেও সে সব সময় বঞ্চিত হয়। ভাল কিছু করলে প্রশংসা জোটে না।খাবারের ক্ষেত্রেও একজন পুত্র সন্তানের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকে।পরিবারে একজন পুরুষের মতই একজন নারী শ্রম দেন,এমনকি বেশিও শ্রম দিয়ে থাকেন পরিবারে কথা চিন্তা করে। মনে করি একটি পরিবারে স্বামী স্ত্রী একই চাকরি করে তাহলে দেখা যাবে স্বামী স্ত্রীর তুলনায় যথেষ্ট পিছিয়ে থাকে। কারণ স্বামী শুধু চাকরি এবং বাজারের কাজ টুকটাক করে কিন্তু স্ত্রী তার চেয়ে বেশি কাজ করেন। কারণ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একজন নারী যন্ত্রের মত কাজ করতে থাকে।

এমনকি অফিস থেকে ফিরে আসা স্বামীর জন্যও শরবত বা হালকা নাস্তা বানাতে হয়।স্বামী তার খাবার জন্য এক গ্লাস জলও ঢালতে পারে না।তাছাড়াও রান্না বান্না করা, কাপড় চোপড় ধোঁয়া, ঘর পরিষ্কার করা,সন্তানদের খেয়াল রাখার দায়িত্ব যেন শুধু স্ত্রীরই।সে হিসেব অনুযায়ী যদি ধরা হয় তাহলে দেখা যাবে স্বামীর তুলনায় স্ত্রী অনেক বেশি কাজ করে।কারণ স্ত্রীর করা কাজগুলোর জন্য যদি আলাদা আলাদা কাজের লোক রাখা হয় তাহলে অনক টাকার প্রয়োজন হবে।কিন্তু তবুও পরিবারে নারীর সঠিক মূল্যায়ন নেই। পরিবারের মত সমাজেও তার মত প্রকাশের কোন অধিকার নেই বা কেউ নারীর মতামতকে গুরুত্ব দিতে চায় না।সমাজে স্বাধীন ভাবে চলাফেরার ক্ষেত্রেও হাজারে বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে।কর্মক্ষেত্রে মজুরী নিয়ে বৈষম্য এবং নানা ধরনের শারীরিক – মানসিক ও যৌন নিপিড়ন তো নারীর নিত্য সঙ্গী। অধিকাংশ নারী বিশেষ করে শিল্প কলে-কারখানায় এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়।

এই যে এত বৈষম্য ও নির্যাতন সে নিরবে সহ্য করে সেটাও পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য অর্থাৎ আপনজনদের কথা ভেবে সে সব কিছু নিরবে সহ্য করে।নারী জন্য রাস্তাঘাট, সমাজ কোনোটায় বেশি নিরাপদ না।কারণ সে সুন্দরভাবে চলাফেরা করতে পারে না। মনের মধ্যে সব সময় একটা সংশয় থেকেই যায়।কারণ মানুষরূপি কিছু জানোয়ার সব সময় সুযোগ খোঁজে, নারীর উপর ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। মানুষের মনোভাব কতটুকু নিকৃষ্ট হলে এমন বিবেকবর্জিত কাজ করার সাহস পেতে পারে।মাঝে মধ্যে মনে হয় ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা আছে তবে সঠিক বাস্তবায়ন নেই। তাছাড়াও বিচারিক আনুষ্ঠানিকতা এবং দীর্ঘসুত্রিতার জন্য অপরাধ প্রবণতা আরো বেড়ে চলেছে।

এজন্য একজন নাগরিক হিসেবে আমার সুপারিশ থাকবে যে ধর্ষকের সাথে ধর্ষকের পিতা মাতাকেও বিচারের আওতায় আনা উচিৎ। কারণ তাঁরা তাদের সন্তানকে নৈতিকতাহীন ভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন। তাহলে পত্র – পত্রিকা খুললে আর ধর্ষণের মত ঘটনা আর চোখে আসবে না। আসলে খুব দুঃখ লাগে যখন সংবাস আসে শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ ধর্ষকের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।দেশ অনেক এগিয়েছে কিন্তু আমাদের মনমানসিকতা কবে আধুনিকায়ন হবে।আর যদি আমাদের মন মানসিকতার কোন পরিবর্তন না হয় তাহলে কি এটাই সোনার বাংলার বৈশিষ্ট্য? দেশ স্বাধীন করার জন্য যারা হাসিমুখে জীবন দিয়েছিল তাদের স্বপ্নে কি এধরণের অপরাধে পরিপূর্ণ একটি দেশ ছিল? সংবিধানে কি সকলের সমতার কথা বলা হয় নি? আসলে সমস্যা হচ্ছে আমাদের মনে,চিন্তায়,মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গিতে।

যারা পরিবারের সুখের জন্য পরিশ্রম করেন,হাসিমুখে নির্যাতন সহ্য করেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দেন তারা কি তাহলে সঠিক মূল্যায়ন পাবে না?তাদের পছন্দ অপছন্দ কি কেউ গুরুত্ব দিবে না? বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সহ পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা আছে যার পেছনে ছিল একজন নারীর সক্রিয় ভুমিকা।কিন্তু তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ না থাকার জন্য বা সঠিক মূল্যায়নের অভাবে নারীর বীরত্বের কথা গেপনেই রয়ে গেছে। তাই নারীর সঠিক মূল্যায়নের অভাব থাকার জন্যই কবি লিখেছেন, -” কত রণে,কত খুণ দিল নর,লেখা আছে ইতিহাসে / কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর লেখা নাই তার পাশে।”তাই এখন সময় এসেছে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর।

তাই আসুন সচেতন হই, নারীর জন্য সুন্দর পরিবেশ তৈরি করি,নারীকে সঠিক মূল্যায়ন করি,তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।নারীকে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই। সর্বদা নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সজাগ হই।নারী যেন সর্বদা তার অধিকার পায় সে দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ।

এজন্য আমাদের মন- মানসিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো লাগবে। আর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেলে নিরাপত্তা হবে নারীর সঙ্গী। মানবসমাজে আসুক সমতা,মানবতার হোক জয়,প্রতিবাদ হোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

 

সমাপ্ত

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

পাল্টে গেলে দৃষ্টিভঙ্গি, নিরাপত্তা হবে নারী সঙ্গী

আপডেট সময় : ০৩:৪৮:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০২৩

মাইকেল টুডু, ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ

মহান পরম করুণাময় তাঁর অসীম ভালবাসা দিয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ করে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ হচ্ছে প্রাণীকুলের শ্রেষ্ঠ জীব কারণ তার বোধ শক্তি আছে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় মানব সৃষ্টির অর্ধেক নর অর্ধেক নারী। বৈশিষ্ট্যগত ভাবে দেখলে নারী ও পুরুষের মধ্যে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। কেমব্রিজ অভিধান অনুযায়ী -একজন পুরুষ হচ্ছেন তিনি, যিনি নিজেকে পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং সেভাবে জীবন যাপন করেন। ঠিক তেমনি একজন নারী হচ্ছেন তিনি, যিনি নিজেকে নারী হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং সেভাবে জীবন যাপন করেন।

নারী এবং পুরুষ হচ্ছে একে অপরের পরিপূরক। সব কিছুতেই নারী পুরুষের সমান ভুমিকা রয়েছে। কবির ভাষায়- ”বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,অর্ধেক তার নর।”একজন নারী কারো মা,কারো বোন, কারো স্ত্রী। একজন নারীর আদর – সোহাগ – ভালবাসা পাবার জন্য একজন পুরুষের হৃদয় ব্যাকুল হয়ে থাকে।কিন্তু আমাদের প্রিয় পুরুষশাসিত সমাজে একজন নারী সঠিক মূল্যায়ন পেয়েছে কি না,আদর, সোহাগ, ভালবাসার প্রতিদানে সমভাবে শ্রদ্ধা ভালবাসা পেয়েছে কি না,সঠিক যত্ন বা মর্যাদা পেয়েছে কি না – তা মনে রাখার প্রয়োজন আমাদের একেবারে থাকে না।কারণ পুরুষশাসিত সমাজে নারী মাত্রই ভোগের পণ্য।

স্রষ্টা নারীকে পুরষের পরিপূরক করে সৃষ্টি করলেন আর পুরুষ নারীকে পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে দিল।কারণ নারী হচ্ছে অবলা জাতি।আসল কারণ হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা।হায় রে! পুরুষশাসিত সমাজ, কোথায় আমাদের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক।এজন্য আমরা কখনো অনুধাবন করার চেষ্টা করি না, আমাদের নারীরা কেমন আছে।একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে বর্তমানে নারী সমাজ কেমন শোচনীয় অবস্থায় আছে। যদি ধরি মৌলিক অধিকার বা মানবাধিকারের কথা ধরি তাহলে দেখা যাবে সেখানে কত অসংগতি। অর্থাৎ একজন নারী তার অধিকার থেকে সে সব সময় বঞ্চিত।

পরিবারে তার ইচ্ছে বা পছন্দের কোন মূল্য নেই। আদর ভালোবাসা পাবার ক্ষেত্রেও সে সব সময় বঞ্চিত হয়। ভাল কিছু করলে প্রশংসা জোটে না।খাবারের ক্ষেত্রেও একজন পুত্র সন্তানের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকে।পরিবারে একজন পুরুষের মতই একজন নারী শ্রম দেন,এমনকি বেশিও শ্রম দিয়ে থাকেন পরিবারে কথা চিন্তা করে। মনে করি একটি পরিবারে স্বামী স্ত্রী একই চাকরি করে তাহলে দেখা যাবে স্বামী স্ত্রীর তুলনায় যথেষ্ট পিছিয়ে থাকে। কারণ স্বামী শুধু চাকরি এবং বাজারের কাজ টুকটাক করে কিন্তু স্ত্রী তার চেয়ে বেশি কাজ করেন। কারণ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একজন নারী যন্ত্রের মত কাজ করতে থাকে।

এমনকি অফিস থেকে ফিরে আসা স্বামীর জন্যও শরবত বা হালকা নাস্তা বানাতে হয়।স্বামী তার খাবার জন্য এক গ্লাস জলও ঢালতে পারে না।তাছাড়াও রান্না বান্না করা, কাপড় চোপড় ধোঁয়া, ঘর পরিষ্কার করা,সন্তানদের খেয়াল রাখার দায়িত্ব যেন শুধু স্ত্রীরই।সে হিসেব অনুযায়ী যদি ধরা হয় তাহলে দেখা যাবে স্বামীর তুলনায় স্ত্রী অনেক বেশি কাজ করে।কারণ স্ত্রীর করা কাজগুলোর জন্য যদি আলাদা আলাদা কাজের লোক রাখা হয় তাহলে অনক টাকার প্রয়োজন হবে।কিন্তু তবুও পরিবারে নারীর সঠিক মূল্যায়ন নেই। পরিবারের মত সমাজেও তার মত প্রকাশের কোন অধিকার নেই বা কেউ নারীর মতামতকে গুরুত্ব দিতে চায় না।সমাজে স্বাধীন ভাবে চলাফেরার ক্ষেত্রেও হাজারে বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে।কর্মক্ষেত্রে মজুরী নিয়ে বৈষম্য এবং নানা ধরনের শারীরিক – মানসিক ও যৌন নিপিড়ন তো নারীর নিত্য সঙ্গী। অধিকাংশ নারী বিশেষ করে শিল্প কলে-কারখানায় এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়।

এই যে এত বৈষম্য ও নির্যাতন সে নিরবে সহ্য করে সেটাও পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য অর্থাৎ আপনজনদের কথা ভেবে সে সব কিছু নিরবে সহ্য করে।নারী জন্য রাস্তাঘাট, সমাজ কোনোটায় বেশি নিরাপদ না।কারণ সে সুন্দরভাবে চলাফেরা করতে পারে না। মনের মধ্যে সব সময় একটা সংশয় থেকেই যায়।কারণ মানুষরূপি কিছু জানোয়ার সব সময় সুযোগ খোঁজে, নারীর উপর ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। মানুষের মনোভাব কতটুকু নিকৃষ্ট হলে এমন বিবেকবর্জিত কাজ করার সাহস পেতে পারে।মাঝে মধ্যে মনে হয় ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা আছে তবে সঠিক বাস্তবায়ন নেই। তাছাড়াও বিচারিক আনুষ্ঠানিকতা এবং দীর্ঘসুত্রিতার জন্য অপরাধ প্রবণতা আরো বেড়ে চলেছে।

এজন্য একজন নাগরিক হিসেবে আমার সুপারিশ থাকবে যে ধর্ষকের সাথে ধর্ষকের পিতা মাতাকেও বিচারের আওতায় আনা উচিৎ। কারণ তাঁরা তাদের সন্তানকে নৈতিকতাহীন ভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন। তাহলে পত্র – পত্রিকা খুললে আর ধর্ষণের মত ঘটনা আর চোখে আসবে না। আসলে খুব দুঃখ লাগে যখন সংবাস আসে শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ ধর্ষকের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।দেশ অনেক এগিয়েছে কিন্তু আমাদের মনমানসিকতা কবে আধুনিকায়ন হবে।আর যদি আমাদের মন মানসিকতার কোন পরিবর্তন না হয় তাহলে কি এটাই সোনার বাংলার বৈশিষ্ট্য? দেশ স্বাধীন করার জন্য যারা হাসিমুখে জীবন দিয়েছিল তাদের স্বপ্নে কি এধরণের অপরাধে পরিপূর্ণ একটি দেশ ছিল? সংবিধানে কি সকলের সমতার কথা বলা হয় নি? আসলে সমস্যা হচ্ছে আমাদের মনে,চিন্তায়,মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গিতে।

যারা পরিবারের সুখের জন্য পরিশ্রম করেন,হাসিমুখে নির্যাতন সহ্য করেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দেন তারা কি তাহলে সঠিক মূল্যায়ন পাবে না?তাদের পছন্দ অপছন্দ কি কেউ গুরুত্ব দিবে না? বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সহ পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা আছে যার পেছনে ছিল একজন নারীর সক্রিয় ভুমিকা।কিন্তু তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ না থাকার জন্য বা সঠিক মূল্যায়নের অভাবে নারীর বীরত্বের কথা গেপনেই রয়ে গেছে। তাই নারীর সঠিক মূল্যায়নের অভাব থাকার জন্যই কবি লিখেছেন, -” কত রণে,কত খুণ দিল নর,লেখা আছে ইতিহাসে / কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর লেখা নাই তার পাশে।”তাই এখন সময় এসেছে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর।

তাই আসুন সচেতন হই, নারীর জন্য সুন্দর পরিবেশ তৈরি করি,নারীকে সঠিক মূল্যায়ন করি,তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।নারীকে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই। সর্বদা নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সজাগ হই।নারী যেন সর্বদা তার অধিকার পায় সে দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ।

এজন্য আমাদের মন- মানসিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো লাগবে। আর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেলে নিরাপত্তা হবে নারীর সঙ্গী। মানবসমাজে আসুক সমতা,মানবতার হোক জয়,প্রতিবাদ হোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

 

সমাপ্ত