সংবাদ শিরোনাম ::
বাগমারায় আহত বন্ধুকে দেখতে এসে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হলেন সোহাগ
খ্রীষ্টফার জয়
- আপডেট সময় : ০৫:১৫:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ২১১ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর বগমারায় আহত বন্ধুকে দেখতে এসে সন্ত্রাসীদের হাতে এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহত ওই যুবকের নাম সোহাগ ( ২৬)। নিহত সোহাগ যশোরের মনিরামপুর এলাকার শরিফ মিস্ত্রীর ছেলে বলে জানা গেছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সোহাগের উপর মর্মান্তিক এক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে উপজেলার ঝিকরা ইউনিয়নের মরুগ্রামে।
সন্ত্রাসীদের হামলায় শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সোহাগ। পরে খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে নিহত সোহাগের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সকালে লাশের ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে বাগমারা থানা পুলিশ। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
শক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আনিছুর রহমানের ছেলে মনাহার ইসলাম তাদের জমিতে থাকা সরিষা তুলতে বিলে যায়। এ সময় একই গ্রামের সাজ্জাদ, আসাদুল, সবুর, লছির সহ বেশ কয়েকজন হাজির হয় মনাহার ইসলামের সরিষার ওই জমিতে। সেখানে তারা মনাহারকে বলতে থাকে তুকে বিলের জমিতে আসতে নিষেধ করেছি তারপরও কেন সরিষা তুলতে এসেছিস। এ সময় উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা বাধে।
বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে মনাহারকে সরিষার জমিতেই সন্ত্রাসী কায়দায় বেধড়ক মারপিট করে। সন্ত্রাসী হামলায় আহত মনাহারকে উদ্ধার করে পাশের আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বন্ধুর উপরে সন্ত্রাসী হামলার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে আহত মনাহার ইসলামের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয় সোহাগ সহ তার দুই বন্ধু। সকালে খবর পেলেও ঢাকা থেকে ঝিকরায় আসতে সোহাগ সহ তার কয়েকজন বন্ধুর রাত হয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের হাতে আহত বন্ধুর বাড়িতে পৌঁছার আগেই মনাহার ইসলামের উপর হামলাকারী ওই সকল সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হয় সোহাগ সহ তার বন্ধুরা। পরে সন্ত্রাসীরা মনাহার ইসলামের বাড়ি সহ তার চাচার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা বাড়ি সহ অনেক কিছু ভাংচুর করেছে।
সেই সাথে নিহতের ঘটনায় কোন মামলা করা হলে তাদেরকেও পিটিয়ে হত্যার হুমকী প্রদান করা হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ঢাকার মালিবাগে একটি কোম্পানিতে চাকরি করতে গিয়ে বাগমারা উপজেলার ঝিকরা ইউনিয়নের মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আনিসার রহমানের ছেলে মনাহার ইসলামের পরিচয় হয় সোহাগের সাথে। সমবয়সী হওয়ায় সেই পরিচয় ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে রুপ নেয়। এসময় দুই জনেই ওই কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দেয়। চাকরি ছাড়লেও বন্ধ হয়নি তাদের যোগাযোগ। প্রায়ই দুজনের মধ্যে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হতো।
আহত মনাহারের চাচা জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের কাঁচি প্রতীকের পক্ষে ভোট করি। কাঁচি প্রতীকের পক্ষে ভোট করায় ভোটের দিন আমার ছোট ভাই সুজনকে পিটিয়ে আহত করে নৌকার সমর্থিক ওই সকল সন্ত্রাসী। পরবর্তীতে গত ২৬ জানুয়ারি আরেক ভাই নুরুল ইসলাম বিলের জমিতে পানি সেচ দেয়ার সময় মেশিনের হ্যান্ডেল নিয়ে পানিতে ফেলে দেয়। সেই সাথে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে। ওই ঘটনায় বাগমারা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৪২৯-১৪৩১ সন মেয়াদে সরকারি একটি খাস পুকুর ইজারা নিয়ে মাছচাষ করে আসছে নুরুল ইসলাম। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নৌকার পক্ষে কাজ করা সন্ত্রাসীরা ওই পুকুর দখলের চেষ্টা করে। দখল নিতে না পেরে একের পর এক হামলা করে আসছে। কাঁচি প্রকীতের পক্ষে কাজ করাই তাদেরকে কোণঠাসা করে রাখতে মরিয়া হয়ে পড়েছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ঝিকরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই বিকাশ কুমারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ বা মামলার ঘটনা ঘটেনি। নিহতের ঘটনায় পুলিশে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
তবে বাগমারা থানার (ওসি) অরবিন্দ সরকারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তিনি ফোন না ধরায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি