আমি চাই কোটা আন্দোলন সফল হোক। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শাহাবুদ্দিন এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
কোটা আন্দোলনে উত্তাল রাবি, বৃষ্টি যেন প্রশান্তির

- আপডেট সময় : ০৭:৪৩:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪ ৬১ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বৃষ্টির মধ্যেও ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন তারা। এসময় যান চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় দুই ঘণ্টা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের শিক্ষার্থী এই আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (৬ জুলাই) সকাল থেকেই হল ও মেস থেকে প্যারিস রোডে অবস্থান নিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল বের প্রমাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে রাবির মূল ফটকের সামনের মহাসড়কে অবস্থান নেন। প্রায় দুই ঘণ্টা গান, কবিতা ও স্লোগানে আন্দোলন চলতে থাকে। অবস্থান শেষে মিছিল বের হয়ে কাজলা গেট হয়ে প্যারিস রোডে এসে শেষ হয়।
এদিকে অবস্থান নেওয়া অবস্থায় মুশলধারে বৃষ্টি নামে। তবে শিক্ষার্থীরা এই বৃষ্টিকে আর্শীবাদ হিসেবে নিচ্ছেন ও তাদের যে আন্দোলন সেটি বেগবান করে যাচ্ছেন। এসময় বিভিন্ন স্লোগান দেন- মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা, সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে, আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার, জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে, কোটা না মেধা, মেধা মেধা, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই সেই সাথে দূরগম গিরী কান্তার মরু দুস্তর পারা বার হে গান গাইতে গাইতে রাজশাহী ঢাকা মহাসড়ক কম্পিত করে শিক্ষার্থীরা।
এসময় আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা ব্যবস্থার সংস্কার না করা হলে আমরা সরকারকে বলতে চাই আরেকটা আঠারো আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে ৷ আমাদের দেশটা যারা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছেন সাংবিধানিকভাবেই তাদেরকে সেটার প্রতিদান দেওয়া হয়েছে। এবং সেটার ফল তাদের বর্তমান প্রজন্মও এখন অবধি ভোগ করছেন। কিন্তু সেই প্রতিদানের পরিমাণই বা কতটুকু হওয়া দরকার ছিল। তারা সংখ্যায় দেশের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশেরও কম এবং তাদের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৬ শতাংশ। যেটা একেবারেই অযৌক্তিক। রেলওয়েতে তাদের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২ শতাংশ। যেটা বলা যায় সম্পূর্ণ কোটার দখলেই। আমরা কোটা বাতিল চাই না, কোটা পদ্ধতির সংস্কার চাই।
তারা আরও বলেন, আমাদের পূর্বসূরিরাও এই কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। তারপর সংসদে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার আবারও সেটা প্রবর্তন করা হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষক শ্রমিকের সন্তান। কিন্তু এছাড়া বাকি যারা আসে তারা সবাই প্রায় প্রতিষ্ঠিত পরিবার থেকেই আসে। দেখা যায়, কোটার সুবিধাও কিন্তু তারা পেয়ে থাকে।
এসময় তারা চারটি দাবি আদায় নিয়ে কথা বলেন। দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকুরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে; কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাকোটায় শূন্যপদ পূরণ করতে হবে; ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটা ব্যবহার করতে পারবে। উল্লেখ্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, প্রতি জনশুমারির সাথে অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান কোটার পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আন্দোলনরত লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইউসুফ শরিফ বলেন, আজকে আমরা কোটার বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাস্তায় অবস্থান করছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজ ব্যবস্থায় বাতিল করা হোক। বৈষম্যমূলক নিয়োগ ব্যবস্থা বাতিল করা হোক। সাধারণ শিক্ষার্থী, মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই বৈষম্য থেকে মুক্তি পাক। ৭১সালে বঙ্গবন্ধু সব মিলিয়ে ৩০% কোটা রেখেছিল চাকরির ক্ষেত্রে কিন্তু বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬% কোটা বহাল রয়েছে। যার ফলে বাকি মাত্র ৪৪% কোটা রাখা আছে। যা সকল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাগ করা হয়। যেখানে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। যারা কম মেধাবী তারা কোটা নিয়ে ভালো চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই কোটা মুলক বৈষম্য দূর করা হোক। সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা মুক্ত করা হোক।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কোটা পদ্ধতি এ বাংলার জমিনে চাই না। কোটা পদ্ধতির ফলে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হয়না। মেধার মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হোক। আমাদের এ আন্দোলন শুধু আমাদের জন্য না, এ আন্দোলন আমাদের পরবর্তী সকল শিক্ষার্থীদের জন্য। সারাদেশে কোটা পদ্ধতি বাতিল নিয়ে আন্দোলন হলেও সরকার নিশ্চুপ কেন তা আমি জানি না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলমান থাকবে।
সার্বিক বিষয়ে আন্দোলনের প্রধান সংগঠক আমানুল্লাহ আমান বলেন, আমরা সকাল থেকে প্যারিস রোডে অবস্থান করি। পরে সেখান থেকে মিছিল বের করে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করি। সেখানে অবস্থান শেষে আমরা মিছিল বের করে কাজলা গেট হয়ে প্যারিস রোডে শেষ হয় আমাদের আজকের কর্মসূচি। আগামীতেও আমরা লাগাতার আন্দোলন করবো। পরবর্তীতে নির্দেশনা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।
একাত্মতা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দিন বলেন, আমি চাই কোটা আন্দোলন সফল হোক। আমি প্রথম বর্ষ থেকে বিসিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার সাথে আমার আশেপাশের বন্ধুরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে আমি হয়তো কোটার জন্য সুযোগ পেয়ে যাবো। কিন্তু আমি সেটা চাই না। সবাই মেধা যাচাইয়ের ভিত্তিতে সুযোগ পাক। আমি এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছি।
এসময় আন্দোলনে প্রায় পনের শতাধিকের অধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয় ও আন্দোলন শেষে তারা মিছিল করতে করতে রাজপথ ছেড়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে প্যারিশ রোডে গিয়ে আন্দোলনের সমাপ্ত করে।
প্রসঙ্গনিউজ২৪/জে.সি