ঢাকা ১২:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ঋত্বিক প্রেমিদের তার স্মৃতিবিজরিত বসতভিটার অংশটুকু সংরক্ষণের দাবি বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচনে জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ‘স্বৈরাচারের দোসরদের নয়, জুলাই বিপ্লবে সহায়তাকারী রুয়েট শিক্ষকদের মধ্য থেকে ভিসি চাই’ বিএমডিএর নতুন চেয়ারম্যান হলেন আসাদুজ্জামান রাবিতে সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় ২৪ উদযাপন উপলক্ষে গরু খাসি নিয়ে বিজয় মিছিল করেছে জিয়া হলের শিক্ষার্থীরা রাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে তালা ; ৪দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গৃহবধুর মৃত্যু দুই বছরের মধ্যে বিলীন হবে ইসরায়েলের অস্তিত্ব : ট্রাম্প ঢাবি নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহর ১৪ প্রস্তাব

তানোরে চাচীকে দাতা সাজিয়ে মায়ের আট বিঘা জমি রেজিস্ট্রি বাড়ি ছাড়া বিধবা মা

সারোয়ার হোসেন
  • আপডেট সময় : ০৪:০১:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ৬৭ বার পড়া হয়েছে

তানোর প্রতিনিধি:


রাজশাহীর তানোরে চাচীকে দাতা সাজিয়ে মায়ের আট বিঘা জমি জালিয়াতি করে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সাব রেজিস্ট্রার তৌহিদুল ইসলাম। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মুহুরী রাজ্জাক অধিক টাকার বিনিময়ে এমন জালিয়াতি রেজিস্ট্রি করার ঘটনা ঘটে। রাজ্জাক মুহুরীর বাড়ি তালন্দ ইউপির মোহরগ্রামে।

রেজিস্ট্রির প্রায় কয়েক মাস পর জমির মালিক বয়োজ্যেষ্ঠ ফাতেমা বেওয়া জানতে পারেন। ফাতেমার বাড়ি উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির চিমনা গ্রামে। সে মৃত সমির মোল্লার স্ত্রী। তার একমাত্র ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাসেল আপন চাচী আরজান বেগমকে দাতা সাজিয়ে আট বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। আরজান বেগমের স্মামীর নাম সামির মোল্লা। বাড়ী চিমনা গ্রামে।

এমন জালিয়াতি করে জমি রেজিস্ট্রি নেয়ার খবর জানতে পেরে বিধবা মাকে বাড়িতে রাখেননি সন্তান রাসেল এবং বাড়িতে গেলে মেরে ফেলবে এমন হুমকি দিচ্ছেন। এতে করে বয়োজ্যেষ্ঠ বিধবা ফাতেমা বেওয়া বিচারের আসায় ও জমি ফেরত পেতে সাব রেজিস্ট্রারের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন কিনারা পাচ্ছেন না। ফলে জালিয়াতি করা মুহুরী রাজ্জাক ও সহযোগী এবং দলিল সম্পাদন কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে সাব রেজিস্ট্রারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বুধবার দুপুরের দিকে জমির মালিক ফাতেমা বেওয়া জমি ফেরতের জন্য সাব রেজিস্ট্রারের কাছে যেতে চাইলে নকল নবিশ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর বাধা প্রদান করেন। পরে সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যেতে সক্ষম হন ওই মহিলা। তাকে সাব রেজিস্ট্রার বলেন আপনাকে কোর্টে মামলা করতে হবে, থানায় অভিযোগ হয়েছে। থানায় অভিযোগ করতে গেলে কো পিষ্ট বা নকল নবিশ জাহাঙ্গীর অভিযোগ করতে দেয়নি। সাব রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর কে নির্দেশ দেন থানায় নিয়ে গিয়ে অভিযোগ করিয়ে দিবেন।

এর আগে সকালের দিকে কোপিষ্ট জাহাঙ্গীর ওই বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেেন।
কোপিষ্ট জাহাঙ্গীর বলেন, আমার আত্মীয় হয়, আমি কেন থানায় যাব। তার জামাইকে খবর দেয়া হয়েছে তিনি আসলে কোথায় যাবে জানিনা। এর আগে নাকি আপনি থানায় অভিযোগ করতে দেননি ও জমি রেজিস্ট্রির সাথে আপনি নাকি জড়িত জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন জমি রেজিস্ট্রির পর ওই বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলা এবং তার জামাই জমির খাজনা দিতে গেলে সাব জানিয়ে দেয় হোল্ডিংয়ে কোন জমি নাই।

সাব রেজিস্ট্রার তৌহিদুল ইসলাম বলেন গত অক্টোবর মাসে বিষয় টি জানতে পেরে মুহুরী রাজ্জাককে শোকজ করা হয়েছে এবং আদালতে দলিল বাতিলের মামলা করলে জমি ফেরত পাবে। কিভাবে শুনানি করে জমি রেজিস্ট্রি করা হল জানতে চাইলে তিনি জানান, মুহুরীর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কোর্টে মামলা করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে ও তার সনদ নবায়ন হবে না।

জানা গেছে, উপজেলার চিমনা ও চিনাশো মৌজায় আট বিঘা জমি রয়েছে মৃত সমির মোল্লা ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের নামে। সেই জমি নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন ছেলে জাহাঙ্গীর ওরফে রাসেল। রাসেল ছাড়াও তার দু বোন রয়েছে। সবাইকে বাদ দিয়ে মুহুরী জালালের যোগসাজশে মুহুরী রাজ্জাক তার সনদ নম্বর দিয়ে ও মোটা টাকার বিনিময়ে রেজিস্টি করে দিয়েছেন ।
বিধবা বয়োজ্যেষ্ঠ ফাতেমা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, জমি রেজিস্ট্রির বিষয়ে জানার পরে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এমনকি ধাক্কা দিয়ে ফেলে আমার শিনা ভেঙ্গে দিয়েছে । আমি ভয়ে বাড়িতে যেতে পারছিনা। বাড়িতে গেলে মেরে ফেলবে। খাব কোথায় থাকব কোথায়। থাকা খাওয়ার জায়গা নেই আর মামলা কিভাবে করব।

নিজে চলতে পারিনা, এবয়সে এসে সবাই জালিয়াতি করে আমার জমি রেজিস্ট্রি করে নিল। সাব রেজিস্ট্রারও তিন মাস ধরে জমি ফেরতের কথা বলে আসছে কিন্তু কোন কাজ করছেনা। সাব রেজিস্ট্রার কেমন করে শুনানি করল যে, মালিক ছাড়াই জমি সম্পাদন হয়ে গেল। আমার দুই মেয়ে আছে কোন কিছু না জেনে শুধু টাকার বিনিময়ে এমন জালিয়াতি করে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এখন আমার মরা ছাড়া কোন উপায় নাই বলে সাব রেজিস্ট্রি অফিসেই হাওমাও করে কেঁদে ফেলেন।

তার কান্নায় পুরো অফিস ভারি হয়ে পড়ে। এমনকি দলিলে ফাতেমা বেওয়ার পরিবর্তে রাসেলের চাচী আরজান বেগমের ছবি দেয়া আছে।

অনেকে জানান, সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এক বড় সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে আছে। বিশেষ করে এমন ভয়াবহ জালিয়াতির সাথে সরাসরি জড়িত মুহুরী জালাল, রাজ্জাক ও কোপিষ্ট জাহাঙ্গীর। কারন এখনো ৬ জন কোপিষ্ট ও কয়েক মুহুরী নানা অনিয়মে শোকজ হয়ে আছেন।

থানার ওসি আব্দুর রহিম বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রসঙ্গনিউজবিডি/জে.সি

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

তানোরে চাচীকে দাতা সাজিয়ে মায়ের আট বিঘা জমি রেজিস্ট্রি বাড়ি ছাড়া বিধবা মা

আপডেট সময় : ০৪:০১:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

তানোর প্রতিনিধি:


রাজশাহীর তানোরে চাচীকে দাতা সাজিয়ে মায়ের আট বিঘা জমি জালিয়াতি করে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সাব রেজিস্ট্রার তৌহিদুল ইসলাম। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মুহুরী রাজ্জাক অধিক টাকার বিনিময়ে এমন জালিয়াতি রেজিস্ট্রি করার ঘটনা ঘটে। রাজ্জাক মুহুরীর বাড়ি তালন্দ ইউপির মোহরগ্রামে।

রেজিস্ট্রির প্রায় কয়েক মাস পর জমির মালিক বয়োজ্যেষ্ঠ ফাতেমা বেওয়া জানতে পারেন। ফাতেমার বাড়ি উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির চিমনা গ্রামে। সে মৃত সমির মোল্লার স্ত্রী। তার একমাত্র ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাসেল আপন চাচী আরজান বেগমকে দাতা সাজিয়ে আট বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। আরজান বেগমের স্মামীর নাম সামির মোল্লা। বাড়ী চিমনা গ্রামে।

এমন জালিয়াতি করে জমি রেজিস্ট্রি নেয়ার খবর জানতে পেরে বিধবা মাকে বাড়িতে রাখেননি সন্তান রাসেল এবং বাড়িতে গেলে মেরে ফেলবে এমন হুমকি দিচ্ছেন। এতে করে বয়োজ্যেষ্ঠ বিধবা ফাতেমা বেওয়া বিচারের আসায় ও জমি ফেরত পেতে সাব রেজিস্ট্রারের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন কিনারা পাচ্ছেন না। ফলে জালিয়াতি করা মুহুরী রাজ্জাক ও সহযোগী এবং দলিল সম্পাদন কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে সাব রেজিস্ট্রারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বুধবার দুপুরের দিকে জমির মালিক ফাতেমা বেওয়া জমি ফেরতের জন্য সাব রেজিস্ট্রারের কাছে যেতে চাইলে নকল নবিশ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর বাধা প্রদান করেন। পরে সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যেতে সক্ষম হন ওই মহিলা। তাকে সাব রেজিস্ট্রার বলেন আপনাকে কোর্টে মামলা করতে হবে, থানায় অভিযোগ হয়েছে। থানায় অভিযোগ করতে গেলে কো পিষ্ট বা নকল নবিশ জাহাঙ্গীর অভিযোগ করতে দেয়নি। সাব রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর কে নির্দেশ দেন থানায় নিয়ে গিয়ে অভিযোগ করিয়ে দিবেন।

এর আগে সকালের দিকে কোপিষ্ট জাহাঙ্গীর ওই বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেেন।
কোপিষ্ট জাহাঙ্গীর বলেন, আমার আত্মীয় হয়, আমি কেন থানায় যাব। তার জামাইকে খবর দেয়া হয়েছে তিনি আসলে কোথায় যাবে জানিনা। এর আগে নাকি আপনি থানায় অভিযোগ করতে দেননি ও জমি রেজিস্ট্রির সাথে আপনি নাকি জড়িত জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন জমি রেজিস্ট্রির পর ওই বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলা এবং তার জামাই জমির খাজনা দিতে গেলে সাব জানিয়ে দেয় হোল্ডিংয়ে কোন জমি নাই।

সাব রেজিস্ট্রার তৌহিদুল ইসলাম বলেন গত অক্টোবর মাসে বিষয় টি জানতে পেরে মুহুরী রাজ্জাককে শোকজ করা হয়েছে এবং আদালতে দলিল বাতিলের মামলা করলে জমি ফেরত পাবে। কিভাবে শুনানি করে জমি রেজিস্ট্রি করা হল জানতে চাইলে তিনি জানান, মুহুরীর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কোর্টে মামলা করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে ও তার সনদ নবায়ন হবে না।

জানা গেছে, উপজেলার চিমনা ও চিনাশো মৌজায় আট বিঘা জমি রয়েছে মৃত সমির মোল্লা ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের নামে। সেই জমি নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন ছেলে জাহাঙ্গীর ওরফে রাসেল। রাসেল ছাড়াও তার দু বোন রয়েছে। সবাইকে বাদ দিয়ে মুহুরী জালালের যোগসাজশে মুহুরী রাজ্জাক তার সনদ নম্বর দিয়ে ও মোটা টাকার বিনিময়ে রেজিস্টি করে দিয়েছেন ।
বিধবা বয়োজ্যেষ্ঠ ফাতেমা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, জমি রেজিস্ট্রির বিষয়ে জানার পরে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এমনকি ধাক্কা দিয়ে ফেলে আমার শিনা ভেঙ্গে দিয়েছে । আমি ভয়ে বাড়িতে যেতে পারছিনা। বাড়িতে গেলে মেরে ফেলবে। খাব কোথায় থাকব কোথায়। থাকা খাওয়ার জায়গা নেই আর মামলা কিভাবে করব।

নিজে চলতে পারিনা, এবয়সে এসে সবাই জালিয়াতি করে আমার জমি রেজিস্ট্রি করে নিল। সাব রেজিস্ট্রারও তিন মাস ধরে জমি ফেরতের কথা বলে আসছে কিন্তু কোন কাজ করছেনা। সাব রেজিস্ট্রার কেমন করে শুনানি করল যে, মালিক ছাড়াই জমি সম্পাদন হয়ে গেল। আমার দুই মেয়ে আছে কোন কিছু না জেনে শুধু টাকার বিনিময়ে এমন জালিয়াতি করে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এখন আমার মরা ছাড়া কোন উপায় নাই বলে সাব রেজিস্ট্রি অফিসেই হাওমাও করে কেঁদে ফেলেন।

তার কান্নায় পুরো অফিস ভারি হয়ে পড়ে। এমনকি দলিলে ফাতেমা বেওয়ার পরিবর্তে রাসেলের চাচী আরজান বেগমের ছবি দেয়া আছে।

অনেকে জানান, সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এক বড় সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে আছে। বিশেষ করে এমন ভয়াবহ জালিয়াতির সাথে সরাসরি জড়িত মুহুরী জালাল, রাজ্জাক ও কোপিষ্ট জাহাঙ্গীর। কারন এখনো ৬ জন কোপিষ্ট ও কয়েক মুহুরী নানা অনিয়মে শোকজ হয়ে আছেন।

থানার ওসি আব্দুর রহিম বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রসঙ্গনিউজবিডি/জে.সি