তানোরে অবৈধ সেচ মটরের সংযোগ বিচ্ছিন্নের নির্দেশ
- আপডেট সময় : ০৪:৫২:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩ ১২৭ বার পড়া হয়েছে
তানোর প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোর পল্লী বিদ্যুতের একশ্রেণী অসাধু কর্মকর্তা ও নাম ধারী ইলেক্ট্রেশিয়ান এবং লাইনম্যানরা অধিক টাকার বিনিময়ে মুরগীর ফার্ম, বাগান এবং পুকুরে মাছ চাষের নামে হাজার হাজার বানিজ্যিক সেচ মটর দিয়ে ভূগর্ভের পানি হুমকিতে ফেলার কারনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাংসদের কঠোর নির্দেশনার পরও রহস্যজনক কারনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন তানোর পল্লী বিদ্যুৎ জোনের জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জহুরল ইসলাম। এমন কঠোর নির্দেশনার পরও কর্তা বাবুরা চোখে পড়ার মত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি। এতে করে গভীর নলকূপ অপারেটর ও পরিবেশবিদরা চরম ভাবে ক্ষুব্ধ।
কারন ৭-৮ দশমিক ভূমি কম্পন হলে উপজেলার বাড়ি ঘরসহ সবকিছু বসে তছনছ হয়ে যাবে। সুতরাং দ্রুত মটরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভূগর্ভের পানি রক্ষা ও উপরিভাগের পানি ব্যবহার বাড়াতে বিল কুমারী বিল ও খাল এবং পুকুর, সরকারী রাস্তার নয়নজলি খনন করে রক্ষার দাবি উঠেছে জোরালে ভাবে। নচেৎ কয়েক বছরের গিলে নিবে ভূগর্ভের পানি।
জানা গেছে, জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব ও হাজার হাজার অবৈধ বানিজ্যিক সেচ মটর বসানো হয়েছে। মুরগীর ফার্ম ও বাগানের নামে লাখলাখ টাকার বিনিময়ে বিগত প্রায় ৮-১০ বছর ধরে পল্লী বিদ্যুৎ এসব মটর স্থাপনের জন্য সংযোগ দেন। যার কারনে উপজেলার গভীর নলকূপ গুলোতে পানি উঠছেনা।
এসব নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও অভিযোগ হলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। উপজেলার ভূগর্ভের পানি রক্ষার জন্য পল্লী বিদ্যুতের ঊর্ধ্বত কর্তৃপক্ষ প্রতিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন। এমনকি স্থানীয় সাংসদ ফারুক চৌধূরী গত মাসের ২৬ জুন উপজেলার মাসিক সাধারন সভায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে কঠোর নির্দেশ দিলেও নিরব অবস্থায় তানোর পল্লী বিদ্যুতের কর্তারা।
সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ভূর্গভের পানি হুমকির মধ্যে থাকায় বিগত ২০১৩-১৪ সালের দিকে কৃষি মন্ত্রনালয় উপজেলায় কোন প্রকার সেচ মটর স্থাপন করা যাবেনা মর্মে পরিপত্র জারি করেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা অপেক্ষা করে হাজার হাজার বানিজ্যিক সেচ মটর স্থাপন করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু কর্মকর্তারা জানান, মুরগীর ফার্মের নামে দেওয়া হয়েছে ৫ হর্সের মটর। স্থাপনের আগে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখাপড়া হয় সেচ কাজে ব্যবহার করা যাবে না। ফার্মে কি ৫ হর্সের মটর লাগে। এটা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এক ধরনের চতুরিপনা। কারন ফার্ম ও বাগানের জন্য ১ হর্সের মটর হলেই হয়।
কিন্তু ৫ হর্সের মটর দেওয়া মানে সেচ কাজে ব্যবহার করা ছাড়া কিছুই না। বিশেষ করে নামধারী পল্লী বিদ্যুতের ইলেক্ট্রেশিয়ান শরিফুল ও লিটনসহ অনেকে অফিসকে ম্যানেজ করে মটর দিয়ে তারা এখন কোটিপতি।
বিশেষ করে উজেলার পাঁচন্দর ইউপির দুবইল মাঠে শফিকুল, গোলাম রাব্বানী, ডামপু, জালাল, তালন্দ ইউপির কালনা আম বাগানে মোজাহার, ব্যাংকার শফিকুল সহ কালনা উত্তরপাড়া গ্রামে, লালপুরে পল্লী বিদ্যুতে কাজ করা রফিকুল, কলমা ইউপির নড়িয়াল, মালবান্ধা এবং মুন্ডুমালা পৌরসভা, বাধাইড় ইউপিতে বাড়ি বাড়ি রয়েছে সেচ মটর। শতশত ব্যক্তিরা আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন নির্মান ও বাড়িতে হাউজ করে প্লাস্টিকের লম্বা পাইপের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
সেচ মটর স্থাপন করতে হলে উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। সেচ কমিটি বিগত ২০১৪ সাল থেকে বন্ধ করে দিয়েছেন।
বিএমডিএ সুত্র জানায়, উপজেলায় গভীর নলকূপ সরকারী ৫৩৬ টি মালিকানা ১৬ টি মোট ৫৫২ টি, অগভীর মটর বিদ্যুৎ চালিত ৪১১ টি, ডিজেল চালিত ৫০ টি এলএলপি (বিদ্যুৎ) ৩ টি, এলএলপি (ডিজেল চালিত) ৩৫০ টি, সরকারী মোট সেচ যন্ত্র ১৩৬৬ টি ও মালিকানা ৮৩০ টি। সব মিলে সেচ যন্ত্র ২১৯৫ টি। উপজেলায় আবাদ যোগ্য জমি আছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, সেচের আওতায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর।
পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার জহুরুল ইসলাম বলেন করোনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক কোন জমি যাতে পতিত না থাকে এজন্য মটর দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় মটর না দিলে এত চাষাবাদ হত না। এখন হেড অফিস থেকে নওহাটা অফিসকে নির্দেশ দেন বিচ্ছিন্নের জন্য। তারা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচ্ছিন্ন করার জন্য।
করোনার অনেক আগে মটর স্থাপন হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কি পদক্ষেপ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, মাইকিং করা হবে এবং দ্রুত সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। বাড়ির মটর থেকে সেচ দিলেও সেটাও বিচ্ছিন্ন করা হবে।
পল্লী বিদ্যুৎ রাজশাহী জোনের জেনারেল ম্যানেজার রমেন্দ্র চন্দ্র রায় বলেন, আমি তানোর অপিসকে বলে দ্রুত সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেচ কমিটির সভাপতি (ইউএনও) বিল্লাল হোসেন বলেন বিষয়টি আগামী মিটিংয়ে দেখা হবে, আর অফিস সময়ে আসেন বিস্তারিত আলচনা করা হবে।
প্রসঙ্গনিউজবিডি/জে.সি